শিশুদের ফলাফল প্রকাশে আইডিয়াল স্কুলের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়; এই শব্দগুলো দিয়ে বছরের পর বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিশুদের সাফল্য মাপার যে প্রচলন, তার বাইরে গিয়ে ভিন্ন এক পথ বেছে নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল। এখানে ফলাফল মানে শুধু নম্বর নয়; শিশুর শেখা, বেড়ে উঠা, সহপাঠ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং তার সামগ্রিক বিকাশ। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার বদলে শেখাকে আনন্দময় করে তুলতেই এ বছর ব্যতিক্রমী মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বার্ষিক ফলাফল প্রকাশ করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ার বেইলী টাওয়ারের তৃতীয় তলায় অবস্থিত বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক ফলাফল উৎসব।
বার্ষিক ফলাফল মানেই অনেক শিশুর জন্য চাপ, আর অনেক অভিভাবকের জন্য উৎকণ্ঠা। কে প্রথম, কে দ্বিতীয় এই প্রশ্নের মধ্যেই যেন আটকে থাকে পুরো বছরের পড়াশোনা। তবে সেই চেনা পথের বাইরে গিয়ে এদিন নার্সারি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তবে নার্সারী থেকে ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত কোনো মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি। প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থান নির্ধারণের বদলে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, আগ্রহ ও অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে মন্তব্যমূলক মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এই মূল্যায়ন পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুর প্রকৃত সক্ষমতা চিহ্নিত করা। শুধু পরীক্ষার খাতায় ভালো করার চেয়ে শিশুর ভাষা দক্ষতা, গণিতচর্চা, খেলাধুলা, শিল্পচর্চা ও সামাজিক আচরণ সবকিছুকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিশু ও অভিভাবক দুজনের মধ্যেই চাপ কমবে এবং শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
এ বিষয়ে প্রাইমারি শাখার দায়িত্বে থাকা শিফট ইনচার্জ নাভানা জেসমিন বলেন, “আমরা নম্বরভিত্তিক মেরিট লিস্টের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী শেখার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সহপাঠ কার্যক্রম, আচরণগত উন্নয়ন ও মেধার বিকাশ এই বিষয়গুলো একসঙ্গে মূল্যায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য।”
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ভাষা ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, গণিত ক্লাব, আর্ট ও কালচারাল ক্লাবসহ নানা সহশিক্ষা কার্যক্রম। এসব ক্লাবের মাধ্যমে শিশুরা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের আগ্রহ ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিতে প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতি শাখায় ২০ জন করে শিক্ষার্থী নিয়ে দুই শিফটে পাঠদান করা হয়। পুরো প্রাইমারি শাখায় দায়িত্ব পালন করছেন ২২ জন শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও শিক্ষানুরাগী কাসেম জামাল বলেন, “শিক্ষাকে আমরা প্রতিযোগিতার ময়দান হিসেবে দেখতে চাই না। শিক্ষা হলো জ্ঞান অর্জনের জায়গা। শিশুদের বেড়ে উঠার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তাদের সামগ্রিক কার্যক্রম মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। সে কারণেই এ বছর আমরা অসুস্থ প্রতিযোগিতার বাইরে গিয়ে ফলাফল প্রকাশ করেছি।”
নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের এই উদ্যোগকে অনেক অভিভাবকই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, নম্বরের দৌঁড়ে না ছুটে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে সহায়ক এমন মূল্যায়ন পদ্ধতি সময়োপযোগী এবং অনুকরণযোগ্য।
নম্বরের বাইরে গিয়ে শিশুর সামগ্রিক বিকাশকে গুরুত্ব দিয়ে ফলাফল প্রকাশের এই উদ্যোগ শিক্ষা ক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতা পেছনে ফেলে শিশু মেধা নিয়ে স্বাভাবিক বিকাশে এগিয়ে যাওয়া আরো ত্বরান্বিত করবে বলে আশা প্রকাশ করছে সংশ্লিষ্টরা।





































