নারায়ণগঞ্জ-৫ এ বিএনপির মনোনয়ন পেলেন ‘বিতর্কহীন’ মাসুদুজ্জামান
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেলেন ব্যবসায়ী নেতা, সমাজসেবক ও ক্রীড়া সংগঠক মাসুদুজ্জামান মাসুদ। সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলীয় সূত্র বলছে, গণঅভ্যুত্থানের পর প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিএনপি নতুন মানদণ্ড গ্রহণ করেছে ক্লিন ইমেজ, মাঠে জনসম্পৃক্ততা, সাংগঠনিক অবদান, বিরোধহীন মনোভাব ও ত্যাগী নেতৃত্ব। এই মানদণ্ডে সবচেয়ে এগিয়ে থাকায় মাসুদুজ্জামানকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি বলেছেন, যেসব নেতার এলাকার মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে, স্থানীয় সমস্যা জানেন এবং সমাধানে সক্ষম- তাদেরই এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে। এই বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মাসুদুজ্জামান উপযুক্ত প্রার্থী বলে মনে করছে বিএনপি।
তরুণ বয়সে যুবদল থেকে রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব দেন এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা, ক্রীড়া ও সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততার কারণে নগরীর সাধারণ মানুষের মধ্যেও রয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা।
কোভিড, ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব কিংবা তল্লার মসজিদ বিস্ফোরণের মতো সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে ছিলেন তিনি। গণঅভ্যুত্থানের সময়ও ছাত্র-জনতার প্রতি সহায়তা রাখেন নেপথ্যে থেকে। এসব কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যেও তার প্রভাব ও আস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছে দলীয় সূত্র।
মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য কয়েকজন নেতার সমালোচনার মুখেও কোনো পাল্টা অবস্থান না নিয়ে বরং ঐক্যের বার্তা দেওয়ায় তাকে “সংগঠকসুলভ” বলে আখ্যা দিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। মনোনয়ন পাওয়ার পর তার কর্মী-সমর্থকদের প্রত্যাশা মানুষের আস্থার প্রার্থী হিসেবে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপিকে আবারও শক্ত অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।
তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রত্যেক নেতাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত ছিলেন। তবে, গণঅভ্যুত্থানে পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবার প্রার্থী হিসেবে বিএনপি এমন মুখ খুঁজছিল যাদের- মাঠপর্যায়ে কেবল জনসমর্থন আছে এমন নয়, যিনি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা জানেন এবং সমাধানে সক্ষম। তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ চরিত্রের অধিকারী, বিতর্কহীন এবং ত্যাগীরা এই তালিকায় এগিয়ে ছিলেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ।
তরুণ বয়সে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। নগরীর একটি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতিও ছিলেন। পরে ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করেন, ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বও দেন। তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। শিক্ষা, ক্রীড়া ও সমাজসেবায় আবদান রাখা মাসুদুজ্জামান সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত এক মুখ। বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও তার অবদানের কথা তুলে ধরেছেন বিভিন্ন সময়। এ বিএনপি নেতা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেপথ্যে থেকে নানাভাবে দল ও দলের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা করেছেন। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্র-জনতার পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
আসনটিতে মাসুদুজ্জামান ছাড়াও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও শিক্ষক আলিয়ার হোসেনসহ আরও কয়েকজন।
গত ২৭ অক্টোবর গুলশান কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডাকা হয়। ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওইদিন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করার পরামর্শ দেন দলের হাইকমাণ্ড।
মাসুদুজ্জামান সমর্থকরা বলছেন, সমাজসেবা, শিক্ষা ও ক্রীড়াঙ্গণে বিশেষ অবদান রাখা মাসুদুজ্জামান নগরীর মানুষের কাছে ‘ক্লিন ইমেজের’ অধিকারী বলে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল কিংবা দুর্নীতির অভিযোগ নেই। এমনকি ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দখলবাজি, চাঁদাবাজি কিংবা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাতের অভিযোগ উঠলেও মাসুদুজ্জামান ছিলেন বিতর্কহীন। বরং তিনি দলের ৩১ দফার বার্তা নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে।
কেবল দলীয় কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ রাখেননি নিজেকে, সাধারণ মানুষের সাথেও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ী, নাগরিক সংগঠক, তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকটি মতবিনিময় সভা করেছেন তিনি। সকল পর্যায়ের মানুষের প্রত্যাশার কথা যেমন শুনেছেন তেমনি দিয়েছেন সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও। গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখার কারণে তরুণ জেনজিদের সঙ্গেও রয়েছে তার ভালো বোঝাপড়া।
এছাড়া, সাধারণ মানুষের কাছেও মাসুদুজ্জামানের গ্রহণযোগ্যতা কেবল একজন রাজনীতিক হিসেবে নয়, দুঃসময়ে পাশে পাওয়া একজন মানুষ হিসেবে। কেননা, উৎসব-পার্বন কিংবা কোনো দুর্যোগ সবসময় মাসুদুজ্জামান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি। করোনাকালীন সময়ে ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পাশপাশি আর্থিক অস্বচ্ছল পরিবারের পাশেও ছিলেন মাসুদ। মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনেও নিয়মিত অনুদান করেন তিনি। তল্লার মসজিদ বিস্ফোরণে হতাহত পরিবারের পাশেও দাঁড়ান মাসুদুজ্জামান। এমনকি আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল অনেক পরিবারকে সাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এমনকি নাগরিক দুর্ভোগ নিয়েও কাজ করছেন তিনি। নগরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট নিরসনেও ভূমিকা রেখেছেন তিনি। গড়ে তুলেছিলেন আমার নারায়ণগঞ্জ নামে একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্মও। সম্প্রতি অতিমারীতে রূপ নেওয়া ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধেও কাজ করেছেন তিনি।





































