সমাজসেবা থেকে রাজনীতির মাঠে মাসুদুজ্জামান

দীর্ঘদিন সমাজসেবায় নিজেকে নিবেদিত রেখে নারায়ণগঞ্জবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। করোনাকালের দুর্যোগ থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি সংকটে নিরবচ্ছিন্নভাবে মানুষের পাশে থাকা এ দানবীর, ক্রীড়া সংগঠক ও শিল্প উদ্যোক্তা এখন রাজনীতির সম্ভাব্য নতুন মুখ। সরাসরি রাজনীতির মাঠে এখনও পা না রাখলেও জনসমর্থনের জোয়ার তাকে টেনে নিচ্ছে জনপ্রতিনিধিত্বের কেন্দ্রে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে শহরের দেয়ালজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে একটাই বার্তা- জনতার পাশে থাকা এ মানুষটিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় মানুষ।
নারায়ণগঞ্জের একজন সুপরিচিত শিল্প উদ্যোক্তা মাসুদুজ্জামান মাসুদ। একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক, দানবীর ও সমাজসেবক। প্রয়োজনের সময় যাকে সবসময় পেয়েছে পাশে নারায়ণগঞ্জবাসী। সমাজে তার বিতর্কহীন ভূমিকা ও অবদানের জন্য সর্বস্তরের মানুষের মাঝে রয়েছে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা। সমাজসেবী ও দানবীর হিসেবে পরিচিত মাসুদুজ্জামান এবার রাজনীতির মাঠে আসছেন। তিনি নিজে সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কোথাও কথা না বললেও তার শুভাকাঙক্ষীর ও সমর্থকরা তাকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান।
তাকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান জানিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইনও শুরু করেছেন। যদিও মাসুদুজ্জামান সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। সামাজিক কর্মকাণ্ডেই নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। নারায়ণগঞ্জের বিদ্যমান নাগরিক সমস্যার সমাধানে সম্প্রতি ‘আমার নারায়ণগঞ্জ’ নামে একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্মও দাঁড় করিয়েছেন তিনি।
রপ্তানিমুখী পোশাক ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান স্থানীয়ভাবে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে অধিক পরিচিত। তিনি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা মডেল ডি ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। নারায়ণগঞ্জের সন্তান সফল এ শিল্প উদ্যোক্তা কখনও নেতিবাচক কিংবা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি। বরং নারায়ণগঞ্জ শহরের মানুষের সুখে, দুঃখে, উৎসব-পার্বণে সবসময় পাশে ছিলেন। প্রায়ই তিনি নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে থাকেন। বিশেষ করে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে গরুর মাংস, খেজুর, সেমাইসহ নানা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
ব্যবসীয় মাসুদুজ্জামান একজন শিক্ষানুরাগীও। তিনি নারায়ণগঞ্জে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিষদেও রয়েছেন। বিভিন্ন সময় অসহায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ শিক্ষা সহায়তা দেন। এছাড়া, স্কুল-কলেজ, মাদরাসার অবকাঠামোগত উন্নয়নেও রেখেছেন অবদান।
এ শিল্প উদ্যোক্তার পরিচিতি রয়েছে একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া অঙ্গণে বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি। ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক মাসুদুজ্জামান সুস্থ সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ক্রীড়া অঙ্গণে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় স্থানীয় পর্যায়ে টুর্নামেন্টের আয়োজনেও তার সহযোগিতা পেয়েছেন স্থানীয় ক্রীড়ামোদীরা। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েও দুঃস্থ খেলোয়াড়দের পাশে থাকেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, কোভিড-১৯ এর মতো মহামারীর সময়ে তার কার্যক্রমের জন্য উপকারভোগীরা তাকে মনে রাখবেন সবসময়। করোনার সময়ে যখন পুরো পৃথিবী স্থির, থমকে ছিল অর্থনীতির চাকা, তখনও মানুষের পাশে ছিলেন দানবীর মাসুদুজ্জামান। দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত ব্যক্তি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসিন্দা। প্রথম লকডাউন ঘোষণাও করা হয় এ শহরে। করোনার ভয়াবহতা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে আর্থিক সংকটে পড়েন লোকজন। নিম্নবিত্ত অসহায় মানুষদের পাশে তখন খাদ্যসামগ্রী, প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, নগদ অর্থ ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করেছেন মাসুদুজ্জামান।
শুধু তাই নয়, নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক এক ঘটনা ঘটে ২০২০ সালের এপ্রিলে। সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের পরপর গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান ৩৪ জন। আহত হন আরও বেশ কয়েকজন। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম প্রিয়জনদের হারিয়ে যখন দিশেহারা স্বজনরা তখন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন মাসুদুজ্জামান। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দিয়েছেন আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসায় সহায়তা। এমনকি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের নিজ প্রতিষ্ঠানে এবং বাইরেও চাকরির ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
তার সমর্থকরা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল মাসুদুজ্জামানের। তিনি আন্দোলনকারীদের পাশে থেকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশের বন্যা পরিস্থিতিতেও তিনি বন্যা-দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে ত্রাণ ও আর্থিক সহযোগিতা পাঠিয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকায়।
জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জে একজন সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজে অবদান রেখেছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। আন্দোলনে হতাহতদের আর্থিক সহযোগিতাও দিয়েছেন তিনি। আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অর্থনীতিতে অস্থির অবস্থা দেখা দেয়। পোশাক শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও অস্থিরতা দেখা দেয়। সেই ক্রান্তি লগ্নে ব্যবসায়ীদের নেতা হয়ে দক্ষতার সাথে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন মাসুদুজ্জামান। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যখন অনেক ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ততার কারণে এলাকাছাড়া তখন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতির দায়িত্ব নেন। দীর্ঘ বছর ওসমান পরিবারের অধীনে থাকা এ ব্যবসায়ী সংগঠনটির অচলাবস্থা দূর করেন। দ্রুততার সাথে আয়োজন করেন এ সংগঠনটির নির্বাচন এবং আনেন নতুন নেতৃত্ব।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় যখন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছিল নারায়ণগঞ্জ শহর, সে সময় নারায়ণগঞ্জের সকল পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সামাজিক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন মাসুদুজ্জামান। তার ডাকে সকলে সাড়া দিয়ে সভায় সবাই শহরের শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে মতামত দেন।
সরাসরি রাজনৈতিক কোনো সংগঠনের সঙ্গে না থাকলেও একজন এ বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন তিনি। প্রায় সময় তার বক্তব্যে রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যু উচ্চারিত হয়। নানা বিষয়ে মন্তব্য করেন তিনি। বিশেষ কোনো দলের না হওয়ায় বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদেরও মধ্যেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বেশ জনপ্রিয়তাও রয়েছে তার।
নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষে সবসময় দাঁড়ানো এ সমাজসেবীর বিগত কর্মকাণ্ডের ভূমিকা, অবদান এবং গ্রহণযোগ্যতার কারণে তাকে আগামীতে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান বলে জানান তার সমর্থকরা। তারা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। তাদের প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছেন। শহরে মাসুদুজ্জামানের নামে ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুনও সাঁটানো হয়েছে। তিনি রাজনীতিতে এলে মানুষের উপকার হবে বলেই মনে করেন তার শুভাকাক্সক্ষীরা।