আগস্ট-অক্টোবরে বাড়তে পারে প্রকোপ, সতর্ক অবস্থানে নাসিক
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে ৫২টি ‘ডেঙ্গু হটস্পট’ চিহ্নিত

নারায়ণগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ। চলতি জুলাই মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৩ জন। ফলে ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জেলার মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৩ জনে।
আষাঢ়ের ভারী বর্ষণে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বিস্তার দ্রুত বাড়ছে। চিকিৎসকরা মনে করছেন, আগামী আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসজুড়ে ডেঙ্গুর প্রভাব আরও তীব্র হতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নিয়মিতভাবে ফগার মেশিনে কিটনাশক ছিটানো, লার্ভা ধ্বংস, বহুতল ভবন পরিদর্শন ও নোটিশ প্রদান, পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ চলছে।
নাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাফিয়া ইসলাম জানান, সিটি কর্পোরেশনের তিনটি অঞ্চল—সদর, কদমরসুল ও সিদ্ধিরগঞ্জে ৫২টি এলাকাকে ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮টি এলাকা সদর অঞ্চলে, কদমরসুল ও সিদ্ধিরগঞ্জে রয়েছে ১৭টি করে।
এলাকাগুলো হলোÑ সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের মধ্যে নাসিক ২ নম্বর ওয়ার্ডের মিজমিজি দক্ষিন পাড়া, মিজমিজি পশিম পাড়া ও মিজমিজি সাহেব পাড়া। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চিটাগাং রোড বাস স্ট্যান্ড থেকে সানার পাড় পাম্প পর্যন্ত। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আটি ওয়াপদা কলোনীর মজুমদার খাল পাড় ও উত্তর আজিবপুর আউলাবন এলাকার ডোবা। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আইলপাড়া দক্ষিণ কবির সাহেবের ডোবা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ পাড়া মিতালি বাড়ির পাশে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ডিএনডি খাল। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিকদার বাড়ির মোড় সংলগ্ন পাকা ডাস্টবিন, জালকুড়ি কাঠপটি মোড়, শফিকুলের দোকানের সামনে পাকা ডাস্টবিন, মাদবর বাজার খোলা ডাস্টবিন ও জালকুড়ি নাইনতার পাড়া চার রাস্তার মোড়। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের চিত্তরঞ্জন খাল। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তল্লা কিল্লারপুল পুকুর, তল্লা নতুন রোড রেললাইন পুকুর, তল্লা বড় মসজিদ ডোবা।
সদর অঞ্চলের নাসিক ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বউ বাজার ডোবা, উত্তর চাষাড়া রামবাবুর পুকুর পাড়ের পূর্ব দিকের পুকুর, বার একাডেমী আবর্জনা। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের শশ্মানের পিছনে ডোবা। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাদ্রাসা গলি ডোবা, আমেনা মঞ্জিল পাইকপাড়া ও জিউস পুকুর, পানির টাংকি শাহপাড়া খাল। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ডাইলপটি পরিত্যক্ত প্লট। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের এলএন রোডের ডোবা, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র-৩, বাবুরাইল লেকের দক্ষিণের ডোবা, বায়তুন নূর জামে মসজিদের পশ্চিমের ডোবা ও দেওভোগ জামে মসজিদ পাক্কা রোড পুকুর। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়া আবর্জনা যুক্ত পুকুর, ভূইয়াপাড়া ডোবা ও আবর্জনা। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নইল্লাপাড়া ডোবা, আলামিন নগর এলাকার ডাম্পিং স্পট, ডিয়ারা সরদার গলি আবর্জনা যুক্ত পুকুর ও সৈয়দপুর খাল।
কদমরসুল অঞ্চলের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়াল বাড়ি ঘাট, লক্ষারচর দক্ষিণ পাড়া ও শান্তি নগর সাংবাদিক বাপ্পি সাহেবের পিছনের বাড়ি। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের দড়ি সোনাকান্দা শাহজালাল মাদরাসার সামনের ময়লার স্তুপ ও মাহমুদ নগর বাংলা সিমেন্ট এলাকা। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাকান্দা ত্রিবেনী খাল, শাহী মসজিদ সংলগ্ন চিপা খাল। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের এইচ,এম, সেন রোড বন্দর কলোনী, এইচ, এম, সেন রোড-মাষ্টার পটি ও উইলসন রোড-রেলী বাগান। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্পাহানী জেলে পাড়া। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাবাড়ি গুইসাপের পুকুরের সামনে ও আমিরাবাদ শাহ জামাল সাহেবের বাড়ি। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ লক্ষণ খোলা বদ্ধ খাল। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাচড়া মঞ্জু মিয়ার বাড়ির পাশের বদ্ধ খাল। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুড়িপাড়া দক্ষিণ পাশের খাল এবং চাপাতলি শাহাবুদ্দিন মিয়ার বাড়ির আশেপাশে।
সিটি কর্পোরেশনের তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের তথ্যের ভিত্তিতে বাড়ির আশপাশে কিটনাশক ছিটানো হচ্ছে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
ডা. নাফিয়া ইসলাম বলেন, “সারা বছরজুড়েই আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এই ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাই।”