নারায়ণগঞ্জে একদিনে চার দলের কর্মসূচি, চাপা উত্তেজনা

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ অংশ হিসাবে শুক্রবার (১৮ জুলাই) নারায়ণগঞ্জে আসছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা। একইদিন শহরে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আরও তিনটি রাজনৈতিক দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), গণসংহতি আন্দোলন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিএনপি ছাড়া বাকি তিনটি রাজনৈতিক দল গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বিএনপি তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কটুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সবগুলো দল কর্মসূচিতে ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি রেখেছে।
চার দলের এই পৃথক কর্মসূচিকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ শহরে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। কেননা চারটি কর্মসূচিই দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই। আসন্ন নির্বাচন ও স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক দলগুলোর নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যকে ঘিরে এ উত্তেজনা দেখা দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিশৃঙ্খলার সম্ভবনা দেখছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, চারটি কর্মসূচির বিষয়ে তারা অবগত আছেন এবং কর্মসূচিগুলোতে যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। একইসঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ইসরাত জাহান বলেন, “সবগুলো কর্মসূচিতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের তৎপরতা থাকে। চারটি দলের কর্মসূচি একইদিনে এবং কাছাকাছি স্থানে ঘোষণা করা হলেও এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো শঙ্কা নেই। পরিস্থিতি খুবই ভালো। তারপরও ওইদিন পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।”
একইসঙ্গে শুক্রবার ছুটির দিন হলেও এ কর্মসূচিগুলোকে ঘিরে শহরে যানজটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে, জনভোগান্তি এড়াতে ওইদিন শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও পৃথক পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. সোহেল রানা।
তিনি বলেন, “পঞ্চবটি এলাকায় সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। ওইখানে প্রায় সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং যার কারণে যানবাহনের দীর্ঘ সারি চাষাঢ়া পর্যন্ত চলে আসে। শুক্রবার যাতে এই বিষয়গুলো এড়িয়ে সুন্দরভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।”
স্বাভাবিক দিনগুলোর তুলনায় ওইদিন ‘ট্রাফিক অ্যারেঞ্জমেন্ট’ ভালো থাকবে উল্লেখ করে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আশা করি ট্রাফিক স্মুথ থাকবে এবং জনভোগান্তি এড়ানো যাবে।”
গত বছরের এ জুলাই মাসে সারাদেশ ছিল আন্দোলনে উত্তাল। টানা চারদিন আন্দোলনের পর পঞ্চমদিন ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে পুলিশের গুলি, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীও আন্দোলনকারীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হতাহত হন।
এ দিনটিকে স্মরণ করতে নারায়ণগঞ্জে ‘জুলাই সমাবেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। এদিন চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
একইদিন শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি। জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত এ রাজনৈতিক দল সারা বাংলাদেশে ঘোষিত ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জেও এ আয়োজন করেছে।
এ পদযাত্রায় দলটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্মুখসারির নেতা সার্জিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, তাসনিম জারা, সামান্থা শারমিনদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এনসিপির এ পদযাত্রা চাষাঢ়ায় এসে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। বিকেলে চাষাঢ়ায় বিজয়স্তম্ভের সামনে সমাবেশে বক্তব্যও রাখবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
ওইদিন ডিআইটিতে ‘প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি ও জুলাই ঘোষণাপত্রের’ দাবিতে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা বলেন, ডিআইটিতে বঙ্গবন্ধু সড়কের পশ্চিম পাশের লেনে অস্থায়ী মঞ্চ করা হবে।
এ সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন দলটির প্রধান ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদও।
একইদিন শহরের খানপুরে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কটুক্তির প্রতিবাদে বিকেলে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ জানান, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই নারায়ণগঞ্জে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।
গত বছরের জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো লড়াই করলেও গত কয়েকমাসে দলগুলো, বিশেষ করে দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে দলগুলোর নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দেখা গেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চারটি দলের এ সমাবেশ উত্তেজনা ও শঙ্কা তৈরি করেছে স্থানীয়দের মধ্যে। এদিকে বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিকে ঘিরে দিনভর হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা এই শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।