জমি নিয়ে বিরোধে স্বেচ্ছাসেবক দলের মারধরের শিকার জামায়াত নেতা

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় একটি জমির দখল নিয়ে বিরোধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা মারধরের শিকার হয়েছেন। সোমবার (৭ জুলাই) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে নবাব সলিমউল্লাহ সড়কে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ।
এ ঘটনায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জামায়াত নেতা গোলাম সারোয়ার সাঈদ।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার পাল্টা মারধর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মাহবুব হাসান জুলহাস।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাষাঢ়ায় সলিমউল্লাহ সড়কের পাশের একটি জমির ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নির’ মাধ্যমে মালিক দাবি করা মহানগর জামায়াত ইসলামীর সদস্য গোলাম সারোয়ার সাঈদ একটি এক্সাভেটর দিয়ে ওই জমিতে থাকা একটি দোকান ভাঙতে যান। কিছু অংশ ভেঙেও ফেলা হয়। পরে খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত হাশেম শকু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাখাওয়াত ইসলাম রানা, সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মাহবুব হাসান জুলহাস ও তাদের অনুসারীরা। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে মারধরের শিকার হন গোলাম সারোয়ার সাঈদ।
সাঈদ নারায়ণগঞ্জ মহানগর ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের একজন পরিচালক।
উভয়পক্ষের লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সলিমউল্লাহ সড়কের পাশের বড় একটি অংশের জমির মালিক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক)। নাসিকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ওই জমির একটি অংশে ‘এটেঁল মাটি’ নামে একটি রেস্তোরাঁ চালাতেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী মো. নাসির ওরফে ‘টুন্ডা নাসির’। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্দ লোকজন এ রেস্তোরাঁটি ভাঙচুর চালান। পরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে নাসিরের বেশ কয়েকমাস ভাড়া বকেয়া থাকায় চুক্তি বাতিল করে গত ফেব্রুয়ারিতে আশিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়া হয়।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাখাওয়াত ইসলাম রানা বলেন, আশিকুলের সঙ্গে চুক্তি করে সেখানে একটি ফার্মেসি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। তাকে না জানিয়ে জামায়াত ও শিবিরের লোকজন নিয়ে ওই দোকান এক্সাভেটর দিয়ে ভাঙতে যান সাঈদ। পরে তিনি এবং আশেপাশের ব্যবসায়ীরা তাতে বাধা দেন।
তবে, এই সময় জামায়াত নেতাকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। যদিও একটি ভিডিওতে শওকত হাশেম শকু, সাখাওয়াত ইসলাম রানার উপস্থিতিতে সাঈদকে মারধর করতে দেখা যায়।
এদিকে, সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মাহবুব হাসান জুলহাস পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, দোকান ভাঙতে বাধা দিলে ‘জামায়াত ও শিবিরের লোকজন’ তাকে মারধর করেছেন।
জুলহাস এই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগও থানায় দিয়েছেন বলেও জানান সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ নাছির।
তবে, সিটি কর্পোরেশনের এ জমির ক্রয়সূত্রে মালিক বলে দাবি করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়েজুর রহমান। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত নাজমা রহমানের দেবর। তার এ দাবির প্রেক্ষিতে আদালতে মামলাও করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন।
কথা হলে সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু বলেন, শহরের বাগে জান্নাত মসজিদ থেকে পশ্চিম দিকের সবগুলো দোকানের এবং পেছনের জমির মালিক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। তবে, এই জমির বড় একটি অংশ ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করেছেন ফয়েজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে ‘জাল দলিল’ তৈরির অভিযোগে ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন একটি মামলাও করে। ওই মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। সুতরাং এ জমির মালিকানা ফয়েজুর রহমান বা গোলাম সারোয়ার সাঈদ কেউই দাবি করতে পারেন না।
তবে, মহানগর জামায়াত ইসলামীর নেতা গোলাম সারোয়ার সাঈদ বলেন, ফয়েজুর রহমানের কাছ থেকে ২০১৩ সালে ১৪ শতাংশ ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ পান তিনি। কিন্তু তখন আওয়ামী লীগের লোকজনের কারণে জমির দখলে যেতে পারেননি। আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে তিনি জমিটি দখলে পেতে একাধিকবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দ্বারস্থও হন। এমনকি স্বেচ্ছাসেবক দলের রানা ও সাবেক কাউন্সিলর শকুর সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।
“এ জমি নাকি এখন সিটি কর্পোরেশন থেকে রানা ভাড়া নিছেন। এবং সেখানে কাজ শুরু করেছেন। আমি গতরাতেও তার সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তিনি কাজ বন্ধ করেননি। তাদের কয়েকবার বাধাও দিছি। কিছুদিন আগে আমি আর্মির কাছে লিখিতও দিছি। এতকিছুর পর আমি আজ (সোমবার) কাজ করতে গেলে প্রথমে শকু ভাই আসেন, পরে রানাও আসেন। কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গে আমার কথাও হয়। এরপরই তাদের লোকজন আমার উপর হামলা করে। তারা ভেকুটাও ভাঙচুর করছে”, বলেন এ জামায়াত নেতা।
যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসাইন বলেন, “ওই জায়গার বেশ কিছু জমির মালিক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এবং সেগুলো রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভিন্নজনকে ভাড়াও দেওয়া হয়েছে। এ জমি নিয়ে কারও সঙ্গে বিরোধ হয়েছে কিনা আমরা এখনও অবগত নই। আমাদের কাছে কেউ আসেননি।”
জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, “জামায়াত সমর্থিত সাঈদ একজনের কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বলে সেইখানের দোকান বুলডোজার দিয়ে ভাঙতে গেছেন এবং স্থানীয় দোকানিদের মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সেখানে তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে এক পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, অপরপক্ষ মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।”
“যেহেতু জমিজমার বিষয়টি দেওয়ানি কার্যবিধির অধীনে পড়ে, তাই একজন উপপরিদর্শককে উভয়পক্ষকে নিয়ে সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি একেবারেই ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, কোনো পলিটিক্যাল বিষয় না”, যোগ করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।