শহীদ মাহমুদুর রহমান খানের স্ত্রী মরিয়ম খান
"আমাদের কাছে সান্তনা হিসাবে হয়তো এই গাছটি থাকবে"

"ওরা (সন্তান) বড় হতে হতে কতটা বাবাকে মনে রাখবে জানি না। কিন্তু এই গাছটি দেখলে অন্তত বাবার কথা কিছুটা মনে পড়বে। একটা মানুষের জায়গা তো কোনো গাছ নিতে পারে না। তবে আমাদের কাছে সান্তনা হিসাবে হয়তো এই গাছটি থাকবে।" — কথাগুলো বলছিলেন শহীদ মাহমুদুর রহমান খানের স্ত্রী মরিয়ম খান। কথা বলতে বলতেই কণ্ঠ ধরে আসে, আর এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার ছোট ছেলে, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসনুন রহমান খান মায়ের কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনার হাত রাখে।
শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের কাজীগঞ্জ এলাকায় "জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ" প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘এক শহীদ, এক বৃক্ষ’ কর্মসূচিতে অংশ নেন শহীদ পরিবারগুলো। সেই কর্মসূচিতে গাছ রোপণ করেন মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী মরিয়ম খান। এই গাছ এখন তাদের পরিবারের কাছে শুধু একটি বৃক্ষ নয়, বরং হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের স্মৃতি ধরে রাখার উপায়।
একই কর্মসূচিতে আড়াইহাজার উপজেলার শহীদ আরমান মোল্লার স্ত্রী সালমা আক্তার নিজ হাতে স্বামীর নামে গাছ রোপণ করেন। তিনি বলেন, “এই গাছটি রোপণ করেছি আমার শহীদ স্বামীর স্মৃতির জন্য। মানুষ আসবে, দেখবে তিনি ছিলেন, এখনও আছেন। আমার ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে দেখে ভালো লাগবে।”
এই আবেগঘন কর্মসূচির উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “নারায়ণগঞ্জে যারা জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মরণে প্রথমবারের মতো ‘এক শহীদ, এক বৃক্ষ’ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও স্মৃতির নিদর্শন হিসেবে আমরা ২১ জন শহীদের নামে ২১টি বকুল গাছ রোপণ করেছি।”
প্রতিটি গাছ শহীদদের নাম সংবলিত ফলকসহ স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গণে রোপণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— শহীদ ফারহান ফাইয়াজের পিতা, শহীদ শফিকুলের মা, শহীদ মো. স্বজনের ভাই, শহীদ মো. সাইফুল হাসানের মা, শহীদ মো. মহসিনের স্ত্রী ও সন্তানসহ অন্যান্য শহীদ পরিবারের সদস্যরা
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাসমিন আক্তার (পিপিএম), জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. তামশিদ ইরাম খান।
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্য সচিব জাবেদ আলম প্রমুখ।