নাহিদ-হাসনাতদের আগমন ঘিরে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি এনসিপির

গণঅভ্যুত্থানের পর তরুণদের নেতৃত্বে গড়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগামী ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জে ‘জুলাই পদযাত্রা’ আয়োজন করতে যাচ্ছে। দলটির আত্মপ্রকাশের পর এই প্রথম রাজধানী লাগোয়া গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহর নারায়ণগঞ্জে বড় পরিসরে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে চলেছে এনসিপি, যা দলটির সাংগঠনিক বিস্তার এবং জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ পদযাত্রায় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে দলটির প্রধান নাহিদ ইসলামসহ হাসনাত আব্দুল্লাহ, সার্জিস আলম, তাসনিম জারা, সামান্থা শারমিনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের।
এনসিপির নেতারা বলছেন, জুলাই পদযাত্রা ও শহরে সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক এতে অংশ নেবেন। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষও এই কর্মসূচি নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে দাবি তাদের।
চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে এক সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। দলটির প্রধান হন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। তিনি এ দলে যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদও ছাড়েন।
দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর গতমাসে ৩১ সদস্যের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটির অনুমোদন দেয় এনসিপি। একইসঙ্গে জেলার পাঁচটি উপজেলা সমন্বয় কমিটিও ঘোষণা করা হয়। শুক্রবারের পদযাত্রা ও সমাবেশ সফল করতে সমন্বয় কমিটিগুলো নানা প্রস্তুতি নিয়েছে বলেও জানান নেতারা।
এনসিপির নারায়ণগঞ্জ জেলার সংগঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১৮ জুলাই মুন্সিগঞ্জে পদযাত্রা কর্মসূচি রয়েছে দলটির। জুমার নামাজের পর পদযাত্রায় অংশ নেওয়া গাড়িবহরটি কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জে এসে থাকবে।
নিতাইগঞ্জে মধ্যাহ্নভোজের পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে হতাহত পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন এনসিপির আহ্বায়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। পরে সেখান থেকে পদযাত্রা শুরু হবে। যা এসে থামবে শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া চত্বরে। বিজয়স্তম্ভের সামনে বিকেলে পথসমাবেশের আয়োজনও করা হয়েছে বলে জানান এনসিপির জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহমেদুর রহমান তনু।
এনসিপির এ নেতা বলেন, “আমাদের জেলা ও পাঁচ উপজেলা সমন্বয় কমিটি রয়েছে। পদযাত্রা ও সমাবেশ সফল করতে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।”
এ পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও ‘ব্যাপক আগ্রহ’ দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান দলটির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী। তিনি বলেন, “সারাদেশে আমাদের জুলাই পদযাত্রা চলছে। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার আনাচে-কানাচে আমরা যাচ্ছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই অভ্যুত্থানের মহানায়কেরা- নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সার্জিস আলম, সামান্থা শারমিন, তাসনিম জারারা নারায়ণগঞ্জে আসবেন।
“নারায়ণগঞ্জেও সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করবেন। সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়াও আমরা পাচ্ছি। তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখছি। আশা করছি, কয়েক হাজার মানুষ আমাদের এ পদযাত্রা ও সমাবেশে অংশ নেবেন।”
এই পদযাত্রাকে এনসিপি ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ হিসেবে উল্লেখ করলেও অনেকে এ কর্মসূচিকে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ হিসেবে দেখবেন। এ কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও বিশেষ নজর রয়েছে এনপিপির এ কর্মসূচির দিকে। দলটিও রাজধানীর পাশে এ জেলায় তাদের সামর্থ্য দেখাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এ কর্মসূচিতে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতির সম্ভবনার কথা জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন। তিনি দলটির নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটিরও প্রধান।
আল আমিন বলেন, “যদিও এটি কোনো নির্বাচনী কর্মসূচি না। জুলাই আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সারাদেশেই আমাদের এ পদযাত্রা কর্মসূচি। আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, দেশ গঠনে তাদের ভাবনা জানছি। তারপরও যেহেতু আমরা একটি রাজনৈতিক দল তাই আমাদের এ কর্মসূচিকে ঘিরে আলাদা আগ্রহ রয়েছে মানুষের মাঝে। আমরাও আশা করি, এ কর্মসূচিতে কয়েক হাজার দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও জমায়েত ঘটবে।”