আওয়ামী লীগের পতন না হলে গ্রেপ্তার হতেন মাসুদুজ্জামান!
গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হলে গ্রেপ্তার হতেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও ক্রীড়া সংগঠক মাসুদুজ্জামান মাসুদ। নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এ সভাপতি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাস, বিএনপি নেতা-কর্মীদের সরকার বিরোধী আন্দোলনে আর্থিক সহযোগিতার তথ্য ছিল পতিত সরকারের কাছে। এমনকি গণঅভ্যুত্থানেও আন্দোলনকারীদের নানাভাবে সহযোগিতা করার তথ্যও ছিল গোয়েন্দা সংস্থার হাতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকার পতনের আগে গ্রেপ্তারের হুমকিতে ছিলেন মাসুদুজ্জামান। জুলাই-আগস্টের ৩৬ দিনের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন না হলে তার গ্রেপ্তার হওয়া নিশ্চিত ছিল। এছাড়া, ব্যবসাখাত ছাড়াও সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নানা রোষানলেও পড়তে হতো তাকে। কিন্তু এসব ঝুঁকি উপেক্ষা করেই গণঅভ্যুত্থানে নেপথ্যে ভূমিকা রেখে গেছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্দোলন সময়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অর্থদাতা হিসেবে মডেল ডি ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামানসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম উঠে আসে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্কুলজীবনের বন্ধু।
অন্যদিকে মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বহু আগে থেকেই সরকারবিরোধী অবস্থানের কারণে নজরদারি চলছিল। সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে অর্থায়ন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলার খরচ বহন এবং বিভিন্ন সংকটে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা সংস্থা ও নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের কাছে ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী হরতাল কর্মসূচি থেকে মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হলে তার ফোন তল্লাশি করে পুলিশ মাসুদুজ্জামানের অর্থায়নের প্রমাণ পায় এবং তদন্ত শুরু হয়। তবে সরকারের ছয় মাসের মধ্যে পতন ঘটায় সেই তদন্ত আর এগোয়নি।
জুলাই আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান প্রকাশ্যে এই দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে। ওই সময় মাসুদুজ্জামানকে বিএনপির লোকজন ও আন্দোলনকারীদের ফান্ডিং করছেন বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন শামীম ওসমান। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও জানান।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হিসেবে শহরের সংকট মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা রেখে রাজনীতির সম্ভাব্য নতুন মুখ হয়ে উঠেছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে দলের কাছ থেকেও পেয়েছেন মূল্যায়ন। তাকে সামনে রেখে সদর ও বন্দরের বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও উজ্জীবীত হয়ে উঠেছেন।
মাসুদুজ্জামানের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বিএনপির সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী হিসেবে গণমাধ্যমের শিরোনাম হতেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও গুঞ্জন উঠেছিল। যদিও তখন বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অংশ হয়ে শরিক দল নাগরিক ঐক্যের নেতা এসএম আকরামকে মনোনীত করেছিল। সর্বশেষ নির্বাচন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বর্জন করায় সেই সুযোগ আর আসেনি। তবে এবার তিনি সরাসরি মাঠে নেমেছেন। পেয়েছেন দলেও মনোনয়ন। নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহর ও বন্দরের অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন। পৌঁছে দিচ্ছেন বিএনপির ৩১ দফা কার্যক্রমের লিফলেট।
দীর্ঘদিন সমাজসেবায় নিজেকে নিবেদিত রেখে নারায়ণগঞ্জবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন তিনি। করোনাকাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকা এই দানবীর, ক্রীড়া সংগঠক ও শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চান স্থানীয়রা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, বিএনপির দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে থাকা, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অবদান, ক্লিন ইমেজ ও ব্যাপক জনসমর্থনÑ এসব কারণেই মনোনয়ন পান মাসুদুজ্জামান। সাধারণ মানুষের কাছেও রয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা। তাকে সামনে রেখেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা এগোচ্ছেন।





































