০৫ নভেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫:২৫, ৫ নভেম্বর ২০২৫

দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণায় সাখাওয়াত

দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণায় সাখাওয়াত

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. মাসুদুজ্জামান মাসুদ। সাবেক এ যুবদল নেতার বিগত সময়ে দলের প্রতি আনুগত্য ও মাঠপর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় রাজধানীর পাশে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। দলের হাইকমাণ্ড থেকে নির্দেশনা রয়েছে মতানৈক্যের উর্ধ্বে উঠে দল-মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার। কিন্তু মহানগর বিএনপিরই এক শীর্ষ নেতাকে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল মাধ্যমে ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে তথ্য ছড়াতে দেখা গেছে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানকে। তার অনুসারীরাও বিভিন্ন মাধ্যমে এসব তথ্য ছড়াচ্ছেন। দলীয় একটি সূত্র বলছে, সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে অভিযোগও জানানো হয়েছে।

সাখাওয়াত হোসেন খান নিজেও আসনটিতে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু সেবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে তিনি পরাজিত হন। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু সেবার আসনটি জোটের দলকে ছেড়ে দেয় বিএনপি।

এবার এ আসনে সাখাওয়াত ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, শিক্ষক আলিয়ার হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে, যোগ্যতার মাপকাঠিতে এগিয়ে থেকে মনোনয়ন পান মাসুদুজ্জামান।

তবে, গুঞ্জন রয়েছে, মনোনয়ন বঞ্চিত কয়েকজন নেতা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হবারও পরিকল্পনা করছেন। তবে, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতে দলের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলের হাইকমাণ্ড। ফলে, তাদের প্রকাশ্যে কাউকেই ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায়নি।

কিন্তু ব্যতিক্রম সাখাওয়াত হোসেন খান। গত সোমবার সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠক শেষে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের বিগত দিনের কর্মসূচির ছবি, পোস্ট শেয়ার করতে থাকেন। শুরুতে নিজের পক্ষে প্রচারণা চালানোকে কৌশল হিসেবে বেছে নিলেও তাকে এখন সরাসরিই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করতে দেখা যাচ্ছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করছেন।

মাসুদুজ্জামানের সমর্থকরা বলছেন, মনোনয়ন পাবার পর থেকেই পতিত আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী একদল ব্যক্তি মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অপতথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মনোনয়ন পাবার আগে এ কার্যক্রম শুরু হলেও দলের প্রার্থী ঘোষণার পর এ ধরণের অপপ্রচার আরও বেড়েছে। দলের শীর্ষ নেতাদেরও কেউ কেউ এ ধরণের অপপ্রচারে সহযোগী হচ্ছেন। যা দলকে নারায়ণগঞ্জে বিতর্কিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সাখাওয়াত হোসেন সাম্প্রতিক এক কর্মকাণ্ডে সারাদেশে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। গতমাসে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত চত্বরে এক বিচারপ্রার্থী ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রী, সন্তানকে মারধর করা হয়। ওই হামলার একাধিক ভিডিওতে সাখাওয়াতের তিন ঘনিষ্ঠ জুনিয়র আইনজীবী ছাড়াও মুহুরিকেও দেখা যায়। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেন, সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এরপর এ হামলার ঘটনায় মামলা না নিতে পুলিশকে চাপ প্রয়োগেরও অভিযোগও ওঠে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে। যদিও পরে মামলায় সাখাওয়াতকে হুকুমের আসামি করা হয়।

দলের একাধিক নেতা বলছেন, সাখাওয়াতের এ কর্মকাণ্ডের পর তা নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিএনপি দলীয়ভাবে বিব্রত হয়েছে। তাছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। এবার তিনি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল ক্যাম্পেইনে যুক্ত হয়ে আবারও বিএনপিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। দলীয়ভাবে এজন্ষ তাকে শাস্তির মুখেও পড়তে হতে পারে।

এদিকে, দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের চারটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। আসনগুলোতে দলটির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় বঞ্চিত অনেক নেতা নাখোশ। কিন্তু দলের হাইকমাণ্ড কোনো প্রকার ‘বিদ্রোহ’ বরদাশত করবে না বলে জানিয়েছে। দল থেকে পরিষ্কারভাবে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দলের মনোনীত একক প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘গুপ্ত স্বৈরাচারকে’ প্রতিহত করতে দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তাকে বিজয়ী করতেই নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

দলীয় সূত্র বলছে, চারটি আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত মনোনয়ন বঞ্চিত অন্যদের মধ্যে ঐক্যের এখনো ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তারা কেউই প্রকাশ্যে মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন জানানোর ঘোষণা দেননি। বরং তাদের কার্যক্রম ঐক্যের বিপরীতে দেখা যাচ্ছে। যা আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সুবিধা দিবে বলে মনে করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা।

মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ থাকলেও বহিষ্কৃত হওয়ার আশঙ্কায় কেউই প্রকাশ্যে অবস্থান নিবেন না। সকলে ঘোষিত একক প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন বলে আশাবাদ তৃনমূলের নেতাকর্মীদের।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়