২৬ অক্টোবর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

তিন বছর আগে প্রজ্ঞাপন, নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি

অনিশ্চিত নারায়ণগঞ্জ মেডিকেল কলেজের ভবিষ্যৎ 

অনিশ্চিত নারায়ণগঞ্জ মেডিকেল কলেজের ভবিষ্যৎ 

নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তিন বছর আগে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির পর এখনো প্রকল্পটির কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। এতে মেডিকেল কলেজ আদৌও হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

শিল্প অধ্যুষিত ও ঘনবসতিপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জে জনসংখ্যার তুলনায় স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। নেই হৃদরোগ, বার্ন ইউনিট, কিডনি ডায়ালাইসিস, নিউরোলজি—এমনকি জরুরি সেবার পর্যাপ্ত অবকাঠামোও নেই। ফলে সামান্য জটিল পরিস্থিতিতেই রোগীদের ছুটতে হয় ঢাকায়। সাম্প্রতিক ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতিতেও জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবিটি দীর্ঘদিনের হলেও জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে তেমন উদ্যোগ নেয়নি।

অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী জেলা মুন্সিগঞ্জে অল্প সময়েই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। অনেকের মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা মুন্সিগঞ্জের হওয়ায় সেখানকার প্রকল্প দ্রুত এগোচ্ছে। পক্ষান্তরে নারায়ণগঞ্জে প্রভাবশালী বা সক্রিয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব না থাকায় এখানকার মেডিকেল কলেজ প্রকল্প থমকে আছে।

তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদলের স্বাক্ষরে নারায়ণগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। তখন প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছিল, প্রস্তাবিত ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালকেই মেডিকেল কলেজে রূপান্তর করা হবে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী একটি অংশ এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রজ্ঞাপন জারির পর কলেজ কোথায় স্থাপন হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ তৈরি হয়। তৎকালীন তিন সংসদ সদস্য—গোলাম দস্তগীর গাজী রূপগঞ্জে, নজরুল ইসলাম বাবু আড়াইহাজারে এবং শামীম ওসমান সদর উপজেলায় কলেজ স্থাপনের দাবি তোলেন। এমনকি একটি সংস্থা জায়গা দিতে চাইলেও শামীম ওসমান তাতে আপত্তি জানান।”

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান বলেন, “প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে, তার মানে আজ না হয় কাল মেডিকেল কলেজ হবেই। তবে কখন হবে, সেটিই মূল প্রশ্ন। প্রকল্পটি আমাদের কাছে নেই, মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। আমরা জমি নির্ধারণে পরামর্শ দিয়েছি, কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী জমি পাওয়া যাচ্ছে না।”

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য কমপক্ষে ৩৩ একর সরকারি জমি প্রয়োজন। তবে নারায়ণগঞ্জে এত বড় খালি সরকারি জমি পাওয়া কঠিন বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। তাই জেলা প্রশাসন ২৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠায়।

জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সদর উপজেলার তিনটি স্থান—চরবক্তাবলি (দুটি) ও জালকুড়ি কুতুবপুর—মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়।

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে সরকারি জমি প্রস্তাব করতে, সেখানে তারা স্থাপনা নির্মাণ করবে। আমরা জমি খুঁজছি, কিন্তু প্রয়োজনীয় আয়তনের উপযুক্ত জমি পাওয়া যাচ্ছে না।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়