১৬ নভেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

মনোনয়নবঞ্চিতদের পাশে নেই থানা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা 

মনোনয়নবঞ্চিতদের পাশে নেই থানা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা 

মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয়তা, তৃণমূলে ভূমিকা ও বিগত সময়ে দলের প্রতি আনুগত্যকে বিবেচনায় রেখে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে সমাজসেবক, শিক্ষা ও ক্রীড়ানুরাগী মাসুদুজ্জামান মাসুদকে বেছে নিয়েছে বিএনপি। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দল-ঘোষিত প্রার্থীর পক্ষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার নির্দেশ থাকলেও তা মানছেন না নারায়ণগঞ্জ মহানগরের শীর্ষ কয়েকজন নেতা। তারা দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আভাস দিলেও সাড়া পাচ্ছেন না তৃণমূলে। বরং সদর-বন্দরে দলটির সব ইউনিট ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যস্ত দলীয় প্রার্থীর প্রচারণায়।

গত ৩ নভেম্বর দল চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা পর থেকেই নাখোশ হন মনোনয়ন বঞ্চিত কয়েকজন নেতা। মনোনয়ন-বঞ্চিত নেতাদের এ অংশটি বরং দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। যদিও এই কাজে তারা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কোনো সমর্থন পাচ্ছেন না। তাদের পাশে নেই খোদ মহানগরের অনেক নেতাই, এমনকি সদর ও বন্দর থানা ও উপজেলা কমিটির নেতা এবং  অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দলীয় স্বার্থে মাসুদুজ্জামানের পক্ষেই কাজ করছেন। একইসঙ্গে তারা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও সরব হতে শুরু করেছেন।

আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, লন্ডনের নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলিয়ার হোসেন ও ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল।

দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে খোরশেদ ও আলিয়ার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন জানালেও বাকি চারজন একজোট হয়ে ধানের শীষের প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনকি তার মনোনয়ন বাতিলের দাবিও তুলেছেন।

গত শনিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে এক আকস্মিক সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন মনোনয়নবঞ্চিত এ অংশের নেতারা। ওই সংবাদ সম্মেলনে আবুল কালাম, সাখাওয়াত, টিপু, বাবুল; চারজনই উপস্থিত ছিলেন। তারা সমস্বরে দলের সিদ্ধান্ত বদলানোর দাবি জানান। তাদের বক্তব্যে দল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে বিদ্রোহের আভাসও মিলেছে।

কিন্তু তাদের পাত্তা দিচ্ছেন না বিএনপির তৃণমূল। তারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ধানের শীষের প্রার্থীকে সাধারণ জনগণের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দিতে দিন-রাত অলিগলি ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা। এমনকি প্রার্থীর বিরোধীতাকারীদেরও দলীয় স্বার্থে কাজ করার আহ্বান তাদের।
গত কয়েকদিনের প্রচারণায় বিদ্রোহী কয়েকজন ছাড়া বিএনপির তৃণমূলের সকলকেই একত্র করতে সফল হয়েছে মাসুদুজ্জামান। দলীয় স্বার্থে তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন দলটির সদর ও বন্দর ইউনিটের নেতারাও। কাজ করছেন সহযোগী সংগঠনেরও নেতা-কর্মীরাও। এমনকি মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারাও ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।

মনোনয়ন পাওয়ার আগ থেকেই ঐক্যের আহ্বান ছিল মাসুদুজ্জামানের। ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হবার পর মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যদের বাড়িতে এবং ব্যক্তিগত কার্যালয়ে গিয়ে দেখাও করেছেন তিনি। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এছাড়া, মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, সদস্য শরীফুল ইসলাম শিপলু শুরু থেকেই মাসুদুজ্জামানের পক্ষে কাজ করছেন। মাসুদ পাশে পেয়েছেন সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেন শাহ, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকেও। এছাড়া প্রচারণায় আছেন মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, সদস্যসচিব শাহেদ আহমেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাখাওয়াত ইসলাম রানাও। উল্লেখযোগ্য বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের এই নেতাদের বাইরে হাজারো তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী কাজ করছেন ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে।

বিপরীতে কালাম-সাখাওয়াত-টিপু-বাবুল জোট তাদের নির্দিষ্ট কয়েকজন অনুসারীকে ছাড়া কাউকে পাশে পাচ্ছেন না। শনিবারের সংবাদ সম্মেলনেও তার প্রতিফলন দেখা গেছে। তারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাট্টা হলেও তৃণমূলের সমর্থন ইতোমধ্যেই পেয়েছেন মাসুদুজ্জামান। তবে, শীর্ষ নেতারা দলীয় স্বার্থে বিরোধীতা বন্ধ করে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ শুরু না করলে ভবিষ্যতে তার খেসারত দলকেই দিতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কতিপয় নেতার দলের হাইকমাণ্ডের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনার বিরোধীতা তাদের নিজেদের ভবিষ্যত রাজনীতিকেও ক্ষতিকর দিকে ধাবিত করবে বলেও মত তাদের।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়