১৪ নভেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:২০, ৪ নভেম্বর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন কী হিসেব কষছে বিএনপি?

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন কী হিসেব কষছে বিএনপি?

পাঁচটি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলায় এবার চারটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শিঞ্চাঞ্চল ফতুল্লা ও সদর থানা এলাকার দু’টি ইউনিয়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটিতে এখনো চূড়ান্ত কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি দলটি। ফলে, আসনটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হবে নাকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো জোটের কোনো দলকে ছেড়ে দেওয়া হবে, এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে জোর আলোচনা।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন। তাদের মধ্যে আলোচনায় ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু, সদস্য সচিব আব্দুল বারী ভূঁইয়া, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। এদিকে, গিয়াসউদ্দিন এ আসনে বিএনপির মনোনয়নে একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিতও হয়েছিলেন।

কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন সারাদেশে ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেন, বাদ পড়া আসনগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটিও ছিল। এ আসনে এখনো চূড়ান্ত কাউকে প্রার্থী দেয়নি দলটি। দলের মহাসচিব জানিয়েছেন, বাদ রাখা আসনগুলোর বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিন, নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য আসনগুলোতে মো. মাসুদুজ্জামান মাসুদ (নারায়ণগঞ্জ-৫), আজহারুল ইসলাম মান্নান (নারায়ণগঞ্জ-৩), নজরুল ইসলাম আজাদ (নারায়ণগঞ্জ-২) এবং মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া (নারায়ণগঞ্জ-১) ধানের শীষের প্রার্থী হবেন।

তবে, দলীয় সূত্র বলছে, কৌশলগত কারণে বিএনপি এমন সিদ্ধান্ত নিলেও ঢাকার পাশে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটিতে কোনো প্রার্থী না দেওয়ায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পাশাপাশি তৃণমূলেও ক্ষোভ রয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই কেন্দ্রে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন, হাইকমাণ্ড পর্যন্ত তদবির চলছে। গত কয়েকমাস ধরে সম্ভাব্য এ প্রার্থীরা মাঠে সক্রিয়ও ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছিলেন তারা সরব।

গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির অবস্থান বেশ শক্ত। নেতা-কর্মীদের মধ্যে এমন ধারণাও রয়েছে দলীয় মনোনয়নের মধ্য দিয়েই নির্বাচনে বিজয়ের পথ অনেকটা সুগম হয়। কিন্তু দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, আসনটি এবারও জোটভুক্ত কোনো দলকে ছেড়ে দেওয়া হবে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নির্বাচনকালীন জোট করে। ওই জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসাইন কাসেমী সেবার ধানের শীষ প্রতীকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচনে অংশ নেন। বহুল বিতর্কিত ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।

এবারও জমিয়তের এই নেতা আসনটিতে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গত শনিবার নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বিএনপির আলোচিত নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে এক অনুষ্ঠানে এনে বিএনপির অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ‘আজমতে সাহাবা’ নামে ওই সমাবেশে বিএনপির বাইরে নিজের দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি একেবারে নগন্য থাকায় তা সমালোচনারও জন্ম দেয়। ফলে, বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে কাসেমীকে জোটগতভাবে আসনটিতে ছাড় দিলে জিতে আসার সম্ভাবনা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

এদিকে, গণঅভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বের মধ্য থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও আসনটিতে তাদের দলের যুগ্ম সদস্য সচিব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান আব্দুল্লাহ আল আমিনকে প্রার্থী করেছে। এনসিপি এখনো কোনো জোটে যুক্ত হওয়ার ঘোষণা না দিলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোট গড়লে আসনটিতে আব্দুল্লাহ আল আমিনও হেভিওয়েট প্রার্থী।

তবে, বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জোটের ঘোষিত প্রার্থীর মাঠপর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতার উপরও নির্ভর করছে অনেক হিসেব-নিকেশ। কেননা, কেবল কৌশলগত কারণে আসনটি বিএনপি ছেড়ে দিলেও সেখানে স্বতন্ত্র হিসেবে দলেরই একাধিক প্রার্থী দাঁড়াতে পারেন, এমন গুঞ্জনও রয়েছে।

এ হিসেবের হাওয়ায় আরও পাল লেগেছে এবারের নির্বাচন কমিশনের কিছু নিয়মের পরিবর্তনের কারণেও। ইসির বিধিমালা অনুযায়ী, এবার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থী তার নিজ রাজনৈতিক দলের প্রতীক পাবেন। অর্থ্যাৎ, গতবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সকল প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারলেও, এবার সে সুযোগ থাকছে না। বিএনপি কোনো আসন জোটগতভাবে ছেড়ে দিলেও প্রার্থীকে তার নিজ দলের প্রতীক নিতে হবে। সেক্ষেত্রে, মনির হোসাইন কাসেমী তার দল জমিয়তে ইলামায়ে ইসলামের প্রতীক খেজুর গাছ এবং আব্দুল্লাহ আল আমিন এনসিপির শাপলা কলি প্রতীকেই লড়বেন। ফলে, জোটগতভাবে বিএনপি ছাড় দিলেও ধানের শীষের বিপরীতে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না বিএনপির বিদ্রোহীদের।

তবে, সবকিছু ছাপিয়ে এ মুহূর্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন চলছে, বিএনপি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন কার জন্য ছাড় দেবে, এবং জোটের কাঠামো কীভাবে স্থির হবে। একইসাথে জোটকে ছাড় দিলে বিএনপি তার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও কীভাবে নিভৃত রাখবেন তাও বড় প্রশ্ন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়