ক্ষোভ থাকলেও বহিষ্কৃত হওয়ার ভয় মনোনয়ন বঞ্চিতদের
নারায়ণগঞ্জের চারটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী দলÑ বিএনপি। চারটি আসনেই একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি। তবে, আসনগুলোতে দলটির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় বঞ্চিত অনেক নেতা নাখোশ। মনোনয়ন নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের সরাসরি কেউ বিরোধীতা না করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কিংবা তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে এই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও গুঞ্জন চলছে।
কিন্তু দলের হাইকমাণ্ড কোনো প্রকার ‘বিদ্রোহ’ বরদাশত করবে না বলে জানিয়েছে তৃণমূলের নেতারা। দল থেকে পরিষ্কারভাবে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দলের মনোনীত একক প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘গুপ্ত স্বৈরাচারকে’ প্রতিহত করতে দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তাকে বিজয়ী করতেই নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশের ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন বাদ রেখে বাকি চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।
বিএনপির ঘোষণা অনুযায়ী, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আজহরুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ মাসুদুজ্জামান মাসুদ ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন।
তবে, এসব আসনে দলটির জেলা ও মহানগর পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন বঞ্চিত এ নেতারা প্রকাশ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখালেও তাদের কর্মী-সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পুরোনো আন্দোলন-সংগ্রামের ভিডিও-ছবিও পোস্ট করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদের বিপরীতে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন ও সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুর। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নান ছাড়াও মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম, সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। মাসুদুজ্জামান মনোনীত হলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, ব্যবসায়ী নেতা আবু জাফর আহমেদ বাবুল, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও শিক্ষক আলিয়ার হোসেন।
দলীয় সূত্র বলছে, চারটি আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত মনোনয়ন বঞ্চিত অন্যদের মধ্যে ঐক্যের এখনো ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তারা কেউই প্রকাশ্যে মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন জানানোর ঘোষণা দেননি। বরং তাদের কার্যক্রম ঐক্যের বিপরীতে দেখা যাচ্ছে। যা আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সুবিধা দিবে বলে মনে করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা।
কেউ কেউ বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর উপর নাখোশ হয়ে সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীদের পক্ষেও কাজ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মনোনয়ন অনেকেই চাইতে পারেন। দল সকলের ক্ষেত্রে এটি উন্মুক্তও রেখেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলে জরিপের পর দল চারজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। তারা যোগ্য বলেই দল বিবেচনায় এনেছেন তাদের। এখন সকলেরই উচিত রাগ-অভিমান না রেখে সকলেই ঘোষিত একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা। এমনটা না হলে দলের ক্ষতি। দলের হাইকমাণ্ড থেকেও এ বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহী কাউকে ছাড় দিবে না দল।”
এই নেতা আরও বলেন, “দল যে কাউকে ছাড় দিচ্ছে না তার প্রমাণ হচ্ছে, মনোনয়ন বঞ্চিত যারা বিক্ষোভ করেছে জেলায় জেলায়, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জেও এর ব্যতিক্রম ঘটবে না। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ। দেশের জনগণের বৃহৎ স্বার্থেই একক প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি ও সমমনা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাজ করতে হবে।”
তৃণমূলে ধারণা, মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ থাকলেও বহিষ্কৃত হওয়ার আশঙ্কায় কেউই প্রকাশ্যে অবস্থান নিবেন না। সকলে ঘোষিত একক প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন বলে আশাবাদ তৃনমূলের নেতাকর্মীদের।





































