এককভাবে নির্বাচন করবে এনসিপি: নাহিদ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত কোনো জোটে না গিয়ে এককভাবে সর্বাধিক আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই আসনগুলোর দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলের প্রয়াত জুলাই যোদ্ধা গাজী সালাউদ্দিনের বাড়িতে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ সব তথ্য জানান নাহিদ।
দলটির প্রধান বলেন, সারাদেশের ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে তার দল। তবে, ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ‘অগ্রণী’ ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের সম্মানে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেবে না এনসিপি।
উদাহরণ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসনগুলো ফাঁকা রাখার দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্য তুলে ধরেন নাহিদ।
তিনি বলেন, “এছাড়া সর্বাধিক আসনে আমরা শাপলা কলির জন্য প্রার্থী দিব। বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনী সংস্কৃতি হিসেবে দেখেছি, যাদের টাকা আছে, যারা এলাকায় গডফাদারগিরি করে তারাই নির্বাচনে দাঁড়ায়। আমরা এবার সেই সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই।”
“বরং এলাকার যে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, সাধারণ মানুষের পাশে যাকে পাওয়া যায়, একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে এলাকার যারা শিক্ষক, ইমাম, গ্রহণযোগ্য সামাজিক নেতৃত্ব রয়েছেন, তাদেরকে আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে দেখতে চাই। তো আমরা সে উদ্দেশ্যে কাজ করছি।”
নির্বাচনী জোট প্রসঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “সমঝোতা বা জোট রাজনৈতিক বা আদর্শিক জায়গা থেকে হতে পারে। যদি সেরকম কোন সম্ভাবনা তৈরি হয়, যেমন জুলাই সনদের বিষয়টা আছে। জুলাই সনদে সংস্কার দাবিগুলোর সাথে যদি কোনো দল ঐক্যবদ্ধ বা সংহতি প্রকাশ করে, সেক্ষেত্রে আমরা জোটের বিষয়টা হয়তো বিবেচনা করবো। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এককভাবেই আগাচ্ছি।”
আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এনসিপি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে বলেও জানান নাহিদ।
গত বছরের জুলাইতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের ছররা গুলিতে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন গাজী সালাউদ্দিন (৪৫)। অপর চোখেও দেখছিলেন ঝাপসা। মুখমন্ডলের পাশাপাশি গলায়ও একাধিক গুলি লেগেছিল তার।
চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, গলায় লাগা গুলির স্প্লিন্টার শ্বাসনালি ছুঁয়ে আছে, এটি বের করা দুঃসাধ্য। শরীরে এ স্প্লিন্টার নিয়েই ১৫ মাস পর গত ১৬ অক্টোবর রাতে মারা যান এ ‘জুলাই যোদ্ধা’।
তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর নাহিদ সাংবাদিকদের দেওয়া বক্তব্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চিকিৎসা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, সারাদেশে অনেক জুলাইযোদ্ধা রয়েছেন। আহতদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণরূপে পালন করতে পারেনি। ফলে এখনো লাশের সারি বাড়ছে। বাড়ছে শহীদের সংখ্যাও।
আন্দোলনে আহতদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
“হয়তো সাময়িক একটা চিকিৎসা অনেকেই পেয়েছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাগুলো যদি অব্যাহত না থাকে, তাহলে এ রকম (সালাউদ্দিনের মৃত্যু) ঘটনা কিন্তু ঘটতে থাকবে। ফলে নির্বাচনের ডামাডোলে যাতে আহত ভাই ও শহীদ পরিবারগুলোর কথা ভুলে না যাই। না হলে আমাদের এই গাজী সালাউদ্দিন ভাইয়ের মত এরকম অনেকেই কিন্তু মৃত্যুবরণ করতে থাকবে”, বলেন নাহিদ ইসলাম।
গাজী সালাউদ্দিনের কবরও জিয়ারত করেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু প্রমুখ।





































