কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা না করলে ঢাকা ‘অচল’ করার হুঁশিয়ারি
আগামী ১৫ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য ‘আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলন’-এর আগেই আহমদিয়া মুসলিম জামাতের (কাদিয়ানী সম্প্রদায়) অনুসারীদের অমুসলিম ঘোষণা না করা হলে ওইদিন রাজধানীকে অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরের পীর আব্দুল হামিদ।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে ‘খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশ’ নামে সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এমন হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির আমীর আব্দুল হামিদ।
শহরের প্রধান সড়কের একপাশের উপর মঞ্চ করে আয়োজিত শুক্রবারের সমাবেশে রাজনৈতিক দল বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মধুপুরের পীর আব্দুল হামিদ বলেন, “সরকার প্রধান যদি ওনার ইজ্জত রক্ষা করতে চায়, তাহলে ১৫ তারিখের আগে আগে আমাদেরকে জানিয়ে দিক ‘কাদিয়ানিরা এদেশে সংখ্যালঘু’। যদি না বলে তাহলে দাবি কেমনে আদায় করে নিতে হয়, সেইটা আমরা মুসলমানরা দেখবো এবং বুঝবো। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) কোথায় যাবেন জানি না। হাসিনার মতো খুনি সরকার এই দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হইছে। ইউনূস তো আর আমাদের জাতীয় সরকার না, সাময়িক কিছু সময়ের জন্য সরকার।”
সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশের দিন প্রয়োজনে অবস্থান কর্মসূচির ডাকও আসতে পারে জানিয়ে মুধপুরের পীর বলেন, “এ নিয়ে আগামীকাল (শনিবার) পরামর্শ হবে। যদি থাকতে হয় তো থাকবো। আর না হলে ঢাকাকে অচল করতে প্রস্তুত আছেন তো সবাই? সরকার যদি সোজা পথে না শোনে তাহলে শোনাইতে তো জানি আমরা। নবীর মহাব্বতে ঢাকাকে অচল করতে আমরা পারবো না?”
“ঢাকার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। সোজা পথে যদি না হয় তাহলে ঢাকাতে কাউকে বাইর হইতেও দেওয়া হবে না, ঢুকতেও দেওয়া হবে না,” যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সমাবেশ বানচাল করতে কোনো চাপ বা কোনো ব্যক্তি যদি আসে, তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। সে যেই হোক। তার দাঁত ভেঙে বাংলার মাটি থেকে উড়িতে দিতে হবে।”
সমাবেশের দিন সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, “মদিনার নবীর প্রেমে আমরা স্কুল, দোকান-পাট, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবো।”
ওইদিন সব ক্বওমী মাদরাসা বন্ধ থাকবে বলেও জানান খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির জেলা শাখার আমীর আব্দুল কাদির।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “কাদিয়ানীদের সংখ্যালঘু হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশে ইতিহাস কায়েম করে দিন। এইটা করতে ব্যর্থ হলে আগামীতে ইসলামি সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে এই দেশে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করবে।”
এই নেতা জুলাই সনদ স্বাক্ষরের দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনকে ‘পশ্চিমা অপসংস্কৃতি’ উল্লেখ করে ব্যাপক সমালোচনা করেন।
বাংলাদেশে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের স্থাপনা উচ্ছেদের হুমকি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন কাসেমী বলেন, “আন্দোলন অনেক হয়েছে। আন্দোলন আর আমরা দেখতে চাই না। আগামী ১৫ নভেম্বর ফাইনাল খেলা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে একটা ঘোষণা যদি না আসে, তাহলে বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের কোনো আস্তানার চিহ্ন আমরা রাখবো না।”
প্রয়োজনে অবস্থান কর্মসূচি কিংবা যমুনা ঘেরাওয়ের জন্যও প্রস্তুত থাকবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আব্দুল কাদিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তাহরিকে খতমে নবুওয়াতের সহসভাপতি আমীর মোহাম্মদ এহসান উল্লাহ আব্বাসী, খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের আমীর হলেন মুফতী নূর হোসাইন নূরানী, খতবে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ইমাদুদ্দীন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মঈনুদ্দিন আহমদ, ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, খেলাফত মজলিসের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আহমদ, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ প্রমুখ।





































