বদলে যাচ্ছে সমীকরণ: মাসুদুজ্জামানকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থন

দলীয় প্রচারে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। শহর ও বন্দরের অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। এতে সাধারণ মানুষের সাড়া যেমন পাচ্ছেন তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গণেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতির মাঠে নামা মাসুদুজ্জামানের সমর্থন দিন দিন বাড়ছে। দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ ছাত্র, তরুণ ও মুক্তিযোদ্ধারাও তার পাশে থাকার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন।
শুধু তাই নয়, আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী কয়েকজন নেতাও মাসুদুজ্জামানের প্রতি আস্থা প্রদর্শন করেছেন। কয়েকমাস তারা নিজেরাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও এখন রয়েছেন মাসুদুজ্জামানের পক্ষে। তার প্রচারণায় নিয়মিত দেখা যাচ্ছে তাদের।
তরুণ বয়সে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। নগরীর একটি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতিও ছিলেন। পরে ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করেন, ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বও দেন। তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। তবে ব্যবসার কারণে সরাসরি রাজনীতির মাঠে না থাকলেও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তিনি সবসময় তাদের পাশে ছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেপথ্যে থেকে নানাভাবে দল ও দলের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা করেছেন। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্র-জনতার পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন সম্ভবনা তৈরির আকাক্সক্ষায় সাধারণ মানুষ তখন মাসুদুজ্জামান বিএনপির প্রার্থী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। সমাজসেবা, শিক্ষা ও ক্রীড়াঙ্গণে তার অবদানের কারণে আগে থেকেই পরিচিত মাসুদুজ্জামান রাজনীতির মাঠ ও রাজনীতির বাইরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তার কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, বিগত সময়ে তার ভূমিকা ও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিমুক্ত ক্লিন ইমেজ দলেরও নজর কেড়েছে।
তবে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী মাসুদুজ্জামান একা নন। এ আসনে বেশ কয়েকজন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা মনোনয় প্রত্যাশী। তারা অনেকেই কেন্দ্রের নজর কাড়তে ব্যক্তিভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কয়েকজন নেতাকে আবার মাসুদুজ্জামানের প্রতিই আস্থা রাখতে দেখা যাচ্ছে।
তাদের মধ্যে একজন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু। তিনি দীর্ঘদিন মহানগেরর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু গতমাসে তিনি মাসুদুজ্জামান মাসুদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে তার পক্ষে কয়েকটি কর্মসূচিতে প্রবীণ এ রাজনীতিককে দেখা যাচ্ছে। তিনি নিজের প্রার্থীতার চেয়ে মাসুদুজ্জামান এ জনপদের লোকজনের জন্য অধিক উপকারী হবেন মনে করেই মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা।
মাসুদুজ্জামানের পক্ষে রাজনীতির মাঠে সরব আছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা সাগর। বন্দরের এ বাসিন্দা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। তার কর্মী-সমর্থকরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন পোস্টারিং-এর মাধ্যমে সে প্রচারণাও চালিয়েছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে মাসুদুজ্জামানের কর্মসূচিগুলোতে এ যুবদল নেতাকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে।
গত শনিবার নগরীর কিল্লারপুলে এক অনুষ্ঠানে গোলাম মোস্তাফা সাগর বলেন, “৩১ দফার আলোকে আয়োজিত এই যুবসমাবেশের মূল আকর্ষণ মাসুদুজ্জামান মাসুদ। মহানগর যুবদল সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি কোনো অঘটন না ঘটে, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে- সেই নির্বাচনে আমরা মাসুদ ভাইয়ের পক্ষে রয়েছি। মাসুদ ভাইয়ের পাওয়ার কিছু নেই, বরং এখন তার সময় দেশকে দেওয়ার। মহানগর যুবদল তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।”
৩১ দফা বাস্তবায়নে মহানগর যুবদলের এই যুব-সমাবেশে মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন জানানো হয়। যুবদলের নেতারা জানান, এ আসনে মাসুদুজ্জামানই যোগ্য। এ অনুষ্ঠানে ছিলেন মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজলও। তিনি মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন দেন। যদিও তার পক্ষে কর্মী-সমর্থকরা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণাও চালিয়েছিলেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাখাওয়াত ইসলাম রানাও। তার বড় ব্যানার-ফেস্টুন শহরের বিভিন্ন স্থানে সাঁটানোও রয়েছে। তার অনুসারী কর্মী-বাহিনীও রয়েছে। কিন্তু তিনি সমর্থন জানিয়েছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদকে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এই সমর্থন এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একসময় যারা নিজেরা প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা এখন মাসুদের প্রচারণায় মাঠে সক্রিয়। এই ঐক্য মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে মাসুদুজ্জামানের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়াবে। কেননা তৃণমূলের মধ্যে বার্তা পৌঁছেছে যে, বেশিরভাগ নেতাই এখন মাসুদুজ্জামান মাসুদের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছেন। তাদের এই অবস্থান তৃণমূলে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে, তৈরি হয়েছে ঐক্যের বার্তা। শুরু থেকেই যে ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন মাসুদুজ্জামান।