যেসব কারণে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে মাসুদুজ্জামান
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রত্যেক নেতাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত। তবে, গণঅভ্যুত্থানে পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবার প্রার্থী হিসেবে বিএনপি এমন মুখ খুঁজছে যাদের- মাঠপর্যায়ে কেবল জনসমর্থন আছে এমন নয়, যিনি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা জানেন এবং সমাধানে সক্ষম। তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ চরিত্রের অধিকারী, বিতর্কহীন এবং ত্যাগীরা এই তালিকায় এগিয়ে থাকবেন। এ বিবেচনায় এখন পর্যন্ত সদর-বন্দর নিয়ে গঠিত জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে এগিয়ে আছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ।
তরুণ বয়সে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। নগরীর একটি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতিও ছিলেন। পরে ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করেন, ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বও দেন। তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। শিক্ষা, ক্রীড়া ও সমাজসেবায় আবদান রাখা মাসুদুজ্জামান সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত এক মুখ। বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও তার অবদানের কথা তুলে ধরেছেন বিভিন্ন সময়। এ বিএনপি নেতা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেপথ্যে থেকে নানাভাবে দল ও দলের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা করেছেন। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্র-জনতার পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
আসনটিতে মাসুদুজ্জামান ছাড়াও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও শিক্ষক আলিয়ার হোসেনসহ আরও কয়েকজন।
গত ২৭ অক্টোবর গুলশান কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডাকা হয়। ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো ওইদিন প্রার্থীরা চূড়ান্ত কোনো বার্তা পাবেন। তবে, দলের হাইকমাণ্ড নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে শক্তিশালী করার দিকে নজর দেবার নির্দেশনা দিয়েছেন। দল যাকে চূড়ান্ত করে মনোনয়ন দিবে তাকে বিজয়ী করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে বলেও জানান।
দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সারাদেশের কোথাও মনোনীত প্রার্থী কাউকে চূড়ান্ত করেনি দল। তবে, দলের হাইকমাণ্ড মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোর্টফোলিও যেমন দেখছেন তেমনি পুরোনো এবং বর্তমান কার্যক্রমের দিকেও নজরদারি রাখছেন। প্রার্থী কেউ চূড়ান্ত না হলেও বিতর্কহীন, ক্লিন ইমেজের নেতারা এবার মনোনয়ন পাবেন তা তারেক রহমানের বক্তব্যেও উঠে এসেছে বলে জানাচ্ছেন দলটির নেতারা।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিসিসি’র বাংলা বিভাগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে এবারের কৌশলের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “কোনো একটি পার্টিকুলার এলাকা থেকে দলের এমন একজন ব্যক্তিকে নমিনেশন দিতে চাইবো, যে ওই এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন, এলাকার মানুষের সাথে যার সম্পৃক্ততা আছে, উঠা-বসা আছে। যে ওই এলাকার মানুষের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ- তরুণ, নারী, মুরুব্বিসহ ছাত্র-ছাত্রী- সকলের সঙ্গে যার যোগাযোগ আছে। এই ধরনের মানুষকেই আমরা অগ্রাধিকার দেবো। যার প্রতি মানুষের জনসমর্থন আছে এবং এই জনসর্থনকে নিজের সাথে রাখতে পারে। ওই রকম দেখেই আমরা মানুষকে মনোনয়ন দেবো।”
তারেক রহমানের বক্তব্যে পরিষ্কার তিনি কেমন প্রার্থী চান আসনগুলোতে। প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ডে ‘ক্লিন ইমেজ, জনপ্রিয় মুখ, ত্যাগ, সাংগঠনিক অবদান এবং বিরোধহীন মনোভাব’ প্রাধান্য দিবে বিএনপি। আর এইসব মানদণ্ডের বিবেচনায় মাসুদুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন তার কর্মী-সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীরা। যুক্তি হিসেবে তারা মাসুদুজ্জামানের বিগত এবং বর্তমান কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরছেন।
মাসুদ সমর্থকরা বলছেন, সমাজসেবা, শিক্ষা ও ক্রীড়াঙ্গণে বিশেষ অবদান রাখা মাসুদুজ্জামান নগরীর মানুষের কাছে ‘ক্লিন ইমেজের’ অধিকারী বলে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল কিংবা দুর্নীতির অভিযোগ নেই। এমনকি ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দখলবাজি, চাঁদাবাজি কিংবা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাতের অভিযোগ উঠলেও মাসুদুজ্জামান ছিলেন বিতর্কহীন। বরং তিনি দলের ৩১ দফার বার্তা নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে।
কেবল দলীয় কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ রাখেননি নিজেকে, সাধারণ মানুষের সাথেও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ী, নাগরিক সংগঠক, তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকটি মতবিনিময় সভা করেছেন তিনি। সকল পর্যায়ের মানুষের প্রত্যাশার কথা যেমন শুনেছেন তেমনি দিয়েছেন সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও। গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখার কারণে তরুণ জেনজিদের সঙ্গেও রয়েছে তার ভালো বোঝাপড়া।
এছাড়া, সাধারণ মানুষের কাছেও মাসুদুজ্জামানের গ্রহণযোগ্যতা কেবল একজন রাজনীতিক হিসেবে নয়, দুঃসময়ে পাশে পাওয়া একজন মানুষ হিসেবে। কেননা, উৎসব-পার্বন কিংবা কোনো দুর্যোগ সবসময় মাসুদুজ্জামান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি। করোনাকালীন সময়ে ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পাশপাশি আর্থিক অস্বচ্ছল পরিবারের পাশেও ছিলেন মাসুদ। মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনেও নিয়মিত অনুদান করেন তিনি। তল্লার মসজিদ বিস্ফোরণে হতাহত পরিবারের পাশেও দাঁড়ান মাসুদুজ্জামান। এমনকি আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল অনেক পরিবারকে সাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এমনকি নাগরিক দুর্ভোগ নিয়েও কাজ করছেন তিনি। নগরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট নিরসনেও ভূমিকা রেখেছেন তিনি। গড়ে তুলেছিলেন আমার নারায়ণগঞ্জ নামে একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্মও। সম্প্রতি অতিমারীতে রূপ নেওয়া ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধেও কাজ করেছেন তিনি।
বিগত সময়ে গণতন্ত্রের পক্ষে ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকার কারণে ত্যাগ স্বীকারও করতে হয়েছে এই বিএনপি নেতাকে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিভিন্নভাবে আন্দোলনকারীদের পক্ষে সহযোগিতা করার কারণে হাসিনা সরকারের গোয়েন্দা তালিকার শীর্ষে ছিলেন ব্যবসায়ী অঙ্গণে পরিচিত মুখ মাসুদুজ্জামান। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হলে তাকে জেলেও যেতে হতো। শুধু তাই নয়, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে জুলুম-নির্যাতনের শিকার বিএনপি ও সমমনা নেতা-কর্মীদের পরিবারের পাশেও ছিলেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে পদে না থাকলেও দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও নেপথ্যে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
তবে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটিতে ভোটের আগেই মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য নেতাদের রোষানলে পড়তে হয়েছে মাসুদুজ্জামানকে। কিন্তু সেখানেও তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে একজন দক্ষ সংগঠকের পরিচয় দিয়েছেন বলে দাবি তার সমর্থকদের। তাদের ভাষ্য, বিএনপির শীর্ষ কোনো পদে না থেকেও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন পাওয়া এই নেতার বিরুদ্ধে মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে বিষোদগার করে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু মাসুদুজ্জামান তাদের কোনো পাল্টা জবাব না দিয়ে বরং বরাবরই ঐক্যের ডাক দিয়ে গেছেন। তিনি দলীয় গ্রুপিং না করে নিজের মতো দলকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এই প্রয়াসই হাইকমাণ্ডকে আকৃষ্ট করবে বলে মনে করেন তারা।





































