২২ অক্টোবর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২১ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ২২:০৫, ২১ অক্টোবর ২০২৫

‘মহা ক্ষমতাধর’ নাসিকের গাড়িচালক জসিম

‘মহা ক্ষমতাধর’ নাসিকের গাড়িচালক জসিম

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি চালক মো. জসিম মিয়া। তেল চুরিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন তিনি। শাস্তির বদলে বরং প্রমোশন পেয়েছেন তিনি। এক সময় সিটি কর্পোরেশনের ট্রাক চালকের দায়িত্বে থাকলেও বর্তমানে তিনি সিটি কর্পোরেশনের প্রধান দুই কর্মকর্তা- প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালান। সামান্য এ গাড়িচালকের প্রভাব এতটাই যে, তিনি তার পরিবারের অন্তত ছয়জন সদস্যকে অস্থায়ী পদে চাকরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন।

সিটি কর্পোরেশনের সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থাকতে চালক হিসেবে নিয়োগ পান জসিম মিয়া। পরে পৌরসভা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন হল অল্প সময়ের মধ্যেই কয়েকজন কর্মকর্তার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। ওইসব কর্মকর্তাকে নানাভাবে আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থাও করে দিতেন জসিম। এই প্রভাবে তিনি সিটি কর্পোরেশনে তার ভাই, ভগ্নিপতি ও ভাতিজাসহ অন্তত ছয়জনের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন তিনি।

জসিম ছাড়াও সিটি কর্পোরেশনে তার তিন ভাই সেলিম মিয়া, ফরিদ মিয়া ও ইসমাইল মিয়া, ভগ্নিপতি আবুল বাশার, ভাই সেলিমের মেয়ে সুমী ও ছেলে সুজন কর্মরত। তাদের মধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ইসমাইল মিয়া মনোহরদী পৌরসভায় বদলি করা হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন।

এছাড়া, সেলিম মিয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কদমরসুল অঞ্চলে অফিস সহায়ক হিসেবে আছেন।

এদিকে, ফরিদ মিয়া ও আবুল বাশার চালক এবং সুমি ও সুজন অফিস সহায়ক হিসেবে আছেন। কয়েক বছর আগে অস্থায়ীভাবে চুক্তিভিত্তিক তাদের নিয়োগ হলেও স্থায়ী কর্মচারীদের চেয়েও তাদের ক্ষমতা বেশি বলে সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মচারীর অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, নাসিকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আস্থাভাজন গাড়িচালক জসিম মিয়া। তার প্রভাবেই তিনি সিটি কর্পোরেশনে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে বেড়ালেও শাস্তি পান না, উল্টো পান প্রমোশন। বিনিময়ে ওই কর্মকর্তাকে নানা আর্থিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থাও করে দেন জসিম।

সিটি কর্পোরেশনের পুরোনো একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালেও জসিম মিয়ার বিরুদ্ধে তেলচুরি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সে সময় তিনি সিটি কর্পোরেশনের ট্রাকচালক ছিলেন। ওই বছর ডিসেম্বরে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি ও জ্বালানি ব্যবহার করে এনজিও’র ময়লা অপসারণের সময় তাকে হাতে-নাতে ধরা হয়। সে সময় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তও করারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই শাস্তি তাকে পেতে হয়নি।

বরং গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হলে তার গাড়ি চালানোর দায়িত্ব পান। প্রতিষ্ঠান প্রধানের গাড়িচালক হয়ে তার প্রভাব আরও বেড়ে যায়। একইসঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাত্রাও। কয়েকমাস আগে তার বিরুদ্ধে আবারও তেল চুরি ও তেলের বিল-ভাউচার নিয়ে কারচুপির অভিযোগ উঠলে তাকে গাড়ি চালানোর কাজ থেকে সরিয়ে দেন ওই সময় প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব থাকা  স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এইচএম কামরুজ্জামান। এমনকি তার বিরুদ্ধে তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে। কিন্তু তদন্ত চলাকালীন সময়ও জসিম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেনের গাড়ি চালানোর দায়িত্বে বহাল থাকেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের চারজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেয়। ওই সময় তদন্তের দায়িত্ব পান যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দিন। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ছিলেন জসিম মিয়া। তবে, অভিযুক্ত অপর তিনজনকে শাস্তিমূলকভাবে এক শাখা থেকে অন্য শাখায় বদলি করা হলেও আওতার বাইরে ছিলেন জসিম মিয়া। তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পাশাপাশি আবার নতুন প্রশাসক আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র গাড়িও চালাচ্ছেন।

এদিকে, তিন কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক রদবদল করা হলেও গাড়িচালক জসিম কীভাবে ছাড় পেল সেই প্রশ্ন সরাসরি প্রশাসকের সামনে তুলেছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

গত ২২ সেপ্টেম্বর সিটি কর্পোরেশনে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক ডাকেন নতুন প্রশাসক আবু নছর আব্দুল্লাহ। ওই সময় দুর্নীতি ও অনিয়মে অভিযুক্ত কর্মচারী জসিমকে প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) গাড়িচালক হিসেবে বহাল রাখার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি নেতা টিপু বলেন, “চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হবার পরেও কীভাবে চালক জসিম আপনার (প্রশাসক) আর প্রধান নির্বাহী (সিইও) সাহেবের গাড়ি চালায়? তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তো প্রমানিত হয়েছে। সে তো আপনাদের তথাগত পারপাস সার্ভ করার জন্য এখানে আছে। আমরা আশা করবো আজকের পর থেকে সে যেন এখানে আর না থাকে।”

কর্পোরেশনের প্রধান দুই কর্মকর্তার গাড়িচালক হিসেবে থাকা জসিম মিয়ার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। এ তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে উপার্জিত টাকা দিয়ে বন্দর উপজেলায় তিনি চারতলা ভবনও নির্মাণ করেছেন।

তবে, এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে নারাজ গাড়ি চালক জসিম মিয়া। মুঠোফোনের নম্বরে যোগাযোগ করা হলে জসিম মিয়া প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, “এগুলো ছাড়া অন্য বিষয়ে কথা বলেন, এগুলা নিয়ে কথা বলবো না। ৯ মাস আগে তদন্ত হইসে, মন্ত্রণালয় যা ব্যবস্থা নেয়ার নিসে।”

পরিবারের সদস্যদের নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন করলেও তিনি এড়িয়ে যান এবং কলটি কেটে দেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়