১৭ অক্টোবর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে বিরোধ

মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে বিরোধ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতি এখন বেশ সরব। তবে মনোনয়ন পাওয়াকে ঘিরে দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব। জেলার পাঁচটি আসনেই দুইয়ের অধিক প্রভাবশালী নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী। কোনো কোনো আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা পাঁচেরও অধিক। মনোনয়ন পাওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে থাকতে একে অপরকে ঘায়েল করতে সভা-সমাবেশে বক্তব্যও রাখছেন তারা। তৈরি করেছেন নিজ নিজ বলয়। এমনকি এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। এতে দলের ভেতরে অস্থিরতা বাড়ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি আসনে দলটির কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। যারা প্রত্যেকেরই আলাদা কর্মী-সমর্থকদের বলয় রয়েছে। নিজ নিজ এলাকায় অবস্থানও বেশ শক্ত। ফলে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক প্রতিযোগিতা। তবে এটি প্রতিযোগিতায় কেবল সীমাবদ্ধ থকেনি, দলীয় অন্তঃকোন্দলে রূপ নিয়েছে। সভা-সমাবেশগুলোতে দেওয়া নেতাদের বক্তব্যে তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। একে অপরকে ছোট দেখাতে নেতিবাচক মন্তব্য করতেও পিছুপা হচ্ছেন না তারা। একই উত্তেজনা রয়েছে তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও। যা মারামারি ও সংঘর্ষেও রূপ নিচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন
নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দীর্ঘ তালিকা এ আসনটিতে। এ তালিকায় দলটির শীর্ষ নেতারাও যেমন রয়েছেন তেমনি আছেন শিল্পপতিরাও। তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সাবেক যুবদল নেতা ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল।

এছাড়া, আসনটিতে তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি মহানগর বিএনপির সভাপতিও ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঘিরে সদর ও বন্দরে ইতোমধ্যে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। বিএনপির বড় একটি অংশ রয়েছে মাসুদুজ্জামান ও কালামের পক্ষে। তবে নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বলয় তৈরি করেছেন সাখাওয়াত ও টিপুও। প্রাইম গ্রুপের বাবুলও আছেন নিজের অনুসারীদের নিয়ে। সকলেই দলীয় কর্মসূচিগুলো পালন করছেন, তবে নিজ অনুসারীদের নিয়ে।

তবে, এদের বাইরে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছেন নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। সাবেক এ যুবদল নেতা করোনা মহামারীর সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও সমাদৃত হয়েছিলেন।

এ আসনে মনোনয়ন চান লন্ডনের নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আলিয়ার হোসেনও। বিএনপি বা সহযোগী সংগঠনের কোনো কমিটিতে না থাকলেও আলিয়ার হোসেনের পরিবার বিএনপি ঘরানার। একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আবুল কালাম তার মামা।

মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা বিএনপির কেন্দ্রের মনোযোগ আকর্ষনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তবে কর্মসূচি পালনের মধ্যেই এ বিভক্তি সীমাবদ্ধ নেই। একে-অপরকে সমালোচনা করেও বক্তব্য রেখে চলেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতির মাঠে।

তবে, একে অপরকে ঘায়েল করে বক্তব্য রাখলেও দিনশেষে দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

নারায়ণগঞ্জ-৪
শ্রমিক অধ্যুষিত ঘনবসতিপূর্ণ এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী শাহ্ আলম।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী নেতা। এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা এ নেতা ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির জেলা কমিটির সভাপতিও ছিলেন। গিয়াসউদ্দিনকে নারায়ণগঞ্জ-৪ এর চেয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গেছে। ওই আসনেও মনোনয়ন চাইতে দেখা গেছে তাকে।

দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতির মাঠে সরাসরি না থাকলেও প্রতিবারই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ আসনটিতে আলোচনায় আছেন শিল্পপতি শাহ আলমের নাম। কয়েক বছর আগে দল থেকে পদত্যাগ করা এ নেতা এখন সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলেও দলটির নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে নিজের পক্ষে রেখেছেন শাহ আলম।

তবে, এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আরও রয়েছেন- জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, জেলা যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সকলেরই নজর কেন্দ্রের দিকে। তবে এই আসনে জোটগত প্রার্থীকেও দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

নারায়ণগঞ্জ-৩
ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সোনারগাঁ উপজেলা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজউল করিম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। 

বিএনপির প্রবীণ নেতা রেজাউল করিম এর আগেও এ আসনে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সংদস্য নির্বাচিত হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে তার রয়েছে ব্যাপক সমর্থন কিন্তু দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকায় তরুণদের মাঝে তার জনপ্রিয়তা কম। তবে এস আসনে মূল প্রতিযোগিতায় রয়েছেন মান্নান, গিয়াস ও মামুন মাহমুদ।

মামুন মাহমুদ একাধিকবার জেলা বিএনপির দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতি ও পেশাগত কারণে রাজনৈতিক অঙ্গণে ক্লিন-ইমেজের রাজনৈতিক হিসেবে তার বেশ পরিচিত রয়েছে। জেলার তার বেশ সমর্থকও রয়েছে।  

গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠা ওই নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি। এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির এ নেতা। স্থানীয়ভাবে নেতা-কর্মীদের উপর বেশ প্রভাবও রয়েছে তার। তার ছেলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজীব বাবার পক্ষে কাজ করছেন।

অন্যদিকে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন। সম্প্রতি এ আসনের সীমানা সম্প্রসারণ করে সিদ্ধিরগঞ্জকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে এর আগেও গিয়াস উদ্দিন এ আসনে কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে এ আসনে নির্বাচনের আশা ব্যক্ত করেছেন। 

মনোনয়নকে কেন্দ্র করে মান্নান ও গিয়াস উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে বেশ উত্তেজনা দেখা গেছে। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে বক্তব্যে তারা একে অপরকে উদ্দেশ্যে করে কথা বলেছেন। এমনকি কটাক্ষ করেও বক্তব্য দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ-২
এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক (ঢাকা বিভাগ) সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর ও তার ভাতিজা কেন্দ্রীয় বিএনপির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।

বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে নজরুল ইসলাম আজাদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তরুণদের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে তার অনুসারী নেতা-কর্মীরা দলীয় কর্মসূচিগুলোতে সরব উপস্থিতি জানান দিয়েছে। যা তার সাংগঠনিক ভিতকে শক্ত করেছে। তাছাড়া, কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে হাইকমাণ্ডের সাথেও তার যোগাযোগ ভালো বলে দাবি তার সমর্থকদের।

তবে, বিগত সময়গুলোর মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় তার মুখোমুখি হতে হবে আতাউর রহমান আঙ্গুর ও মাহমুদুর রহমান সুমনের। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুরের দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা রয়েছে। দলের হাই-কমাণ্ডের সঙ্গেও রয়েছে যোগাযোগ তার। অন্যদিকে তরুণ রাজনীতিক হিসেব কেন্দ্রে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে আঙ্গুরের ভাতিজা মাহমুদুর রহমান সুমনেরও।

স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনোনয়ন প্রত্যাশী এ তিন নেতাকে ঘিরে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা চারভাগে বিভক্ত। এই তিন বলয়ের লোকজনের মধ্যে গত কয়েকমাসে একাধিকবার মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এতে হতাহতও হয়েছেন কয়েকজন।

নারায়ণগঞ্জ-১
রাজধানীর পাশে পূর্বাচল উপশহরের কারণে বেশ আলোচিত রূপগঞ্জ উপজেলা। ফলে এ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। তাদের দু’জনই বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। স্থানীয়ভাবেও রয়েছে বেশ প্রভাব।

স্থানীয়রা জানান, রূপগঞ্জ বিএনপি মনির ও দিপু; এই দুই ভাগে বিভক্ত। উভয়পক্ষের নেতা-কর্মীরা স্থানীয়ভাবে আধিপত্য ধরে রাখার লড়াইয়ে আগে থেকেই মুখোমুখি অবস্থানে। দুই নেতার মধ্যেও এ নিয়ে শীতল সম্পর্ক। মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা তাদের মধ্যে বিরোধ আরও বাড়িয়েছে।

২০১৮ সালে মনির ও দিপু দু’জনই দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ পেয়েও হেরেছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান। এবারও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশা করলেও স্থানীয়ভাবে বেশ প্রভাবশালী অবস্থানে আছেন দিপু ভূঁইয়া। তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সেরও সভাপতি। তরুণ রাজনীতিক হিসেবে কেন্দ্রেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরও যোগাযোগ বজায় রাখছেন কেন্দ্রের সঙ্গে।

এ দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতার মধ্যকার বিরোধীতা ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। তাদের এই দ্বন্দ্ব ছড়িয়েছে তাদের অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। স্থানীয়ভাবে আধিপত্য ধরে রাখতে উভয়পক্ষের নেতা-কর্মীরা গত কয়েকমাসে একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মনোনয়ন কেন্দ্রিক এই প্রতিযোগিতা দলীয় অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। এর পুরো সুবিধা নিচ্ছেন বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলো। এই বিরোধ না মিটালে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে এর জের টানতে হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। যদিও তৃনমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে এই বিরোধ মিটে যাবে এবং কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব নেতা একত্রিত হয়ে যিনি দল থেকে মনোনয়ন পাবেন সবাই তার পক্ষে কাজ করবেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়