যে বসন্তের অপেক্ষায় ছিলাম, সেদিন যেন সেই বসন্ত এসে গিয়েছিল

১৬ জুলাই নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থানকে 'আন্দোলনের বসন্ত' হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ও আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ফারহানা মানিক মুনা। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি লেখেন, "সেদিনের এই মিছিল যেন আক্ষরিক অর্থেই আমাদের জন্য সেই বসন্ত হয়ে উঠেছিল, রাজনীতির শুরু থেকেই আমরা যে বসন্তের অপেক্ষায় ছিলাম। যে বসন্তের অপেক্ষায় আমরা বলতাম 'আসছে বসন্তে আমরা দ্বিগুণ হবো।"
ফারহানা মানিক জানান, ১৫ জুলাই রাতের মশাল মিছিল নারায়ণগঞ্জের বাতাসে ছড়িয়ে দেয় প্রতিবাদের আগুন। পরদিন সকাল থেকে প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। আগের দিন যেখানে মিছিলে মাত্র ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন, সেখানে ১৬ জুলাই সকালের মিছিলে ছিলেন শত শত শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, আগের রাত থেকেই ছাত্রলীগের হামলার আশঙ্কা ছিল। তবু তারা ছিলেন বদ্ধপরিকর—যে কোনো মূল্যে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সংকল্পে। হামলা ঠেকাতে শহীদ মিনার নয়, বেছে নেওয়া হয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহীদ মিনারে একটি দলকে পাহারায় রাখা হয়।
মুনা জানান, সেদিন আন্দোলনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য সেটিই ছিল জীবনের প্রথম মিছিল, প্রথম স্লোগান, প্রথম বক্তব্য। প্রায় ২৫ জন নতুন শিক্ষার্থী সেদিন মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন, ঢাকায় হামলার প্রতিবাদ জানান এবং নিজেদের অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তোলেন।
মিছিলটি প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে নারায়ণগঞ্জ কলেজ, হাইস্কুল পেরিয়ে কালিরবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। তবে সেই মিছিল শেষ হয় নতুন করে জড়ো হওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে।
মিছিল শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। সেখানে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার বিচার এবং আন্দোলনকারীদের বক্তব্যকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যে অবমাননা করা হয়েছে, তার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়।
এসময় জেলা ছাত্রফেডারেশনের সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান, জেলা ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তানজিলাসহ নাম না জানা আরো দুইজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
ফারহানা মানিক তার পোস্টে লেখেন, “ আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল যে কোনো মূল্যেই আন্দোলন গণজোয়ারে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে দাড়িয়ে থাকবো। প্রকৃত অর্থেই আমরা তখন হাতেগোনা কিছু মানুষ, হামলা হলে, আহত হলে আমরা আন্দোলন সংগঠিত না করলে নারায়ণগঞ্জে কিভাবে আন্দোলন গড়ে উঠবে আমরা তখন তা জানতাম না।"