সিদ্ধান্ত স্থগিত করে ভাড়া বাড়ানোর পথ খোলা রাখা হয়েছে: রাব্বি

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে নন-এসি বাসের বর্ধিত ভাড়ার সিদ্ধান্ত বাতিল না করে স্থগিত করার মধ্য দিয়ে আবারও তা বাড়ানোর পথ জেলা প্রশাসক খোলা রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে বাসভাড়া বৃদ্ধি ও পরে সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করার প্রসঙ্গে সংগঠনটির ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি।
একই সময় এ পথে এসি বাসের ভাড়াও ৮০ টাকা থেকে কমিয়ে ৭০ টাকা করার দাবি জানান রাব্বি। এবং কেন্দ্রীয় স্টেশন থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত পাতাল সংযোগের মাধ্যমে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ডাবল লাইনে মেট্রোরেল সংযোগের কাজ বাস্তবায়নেরও দাবি জানান।
গত বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সভায় রাজনৈতিক ও নাগরিক নেতাদের বিরোধিতার পরও বাসভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ পথে বর্ধিত বাসভাড়া কার্যকর করা হয়।
দিনভর তীব্র সমালোচনা ও বিরোধীতার মুখে শুক্রবার সকালে এ পথে বর্ধিত ৫ টাকা বাসভাড়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে পূর্বের মতো ৫০ টাকা রাখার ঘোষণা দেন ডিসি।
এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রফিউর রাব্বি বলেন, “আপনারা জানেন গত তিনদিন আগে নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্ধন ও উৎসব পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সাময়িক হলেও তার অবসান ঘটেছে। সারা দেশে গণপরিবহন নিয়ে এখনো এক অরাজক পরিস্থিতি বহাল রয়েছে। সরকার বদলালেও অরাজকতা দূর হয় না। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে এই অরাজকতা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।”
‘নারায়ণগঞ্জে পরিবহন নিয়ে অরাজকতা দীর্ঘদিনের’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন সেক্টরের মতো এই পরিবহন খাতটি ছিল ওসমান পরিবারের চাঁদাবাজির অন্যতম উৎস। যথেচ্ছভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করে জনগণের দুর্ভোগ তৈরিতে স্থানীয় বিআরটিএ ও প্রশাসন সবসময় তাদের সহায়তা করেছে।”
গণঅভ্যুত্থানের পর গত নভেম্বরে আন্দোলনের মুখে নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫ থেকে কমিয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয় বলেও জানান তিনি।
বর্তমান জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনা করে রাব্বি বলেন, “কিন্তু বর্তমান জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা গত ২০ আগস্ট তরিঘড়ি করে সভা ডেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বন্ধন ও উৎসব বাসের ভাড়া ৫ টাকা বৃদ্ধি করে সবাইকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন। প্রতিবাদের মুখে গতকাল (শুক্রবার) তিনি আবার তা স্থগিতও করলেন। আমরা সভাতেই বলেছিলাম, যেখানে তেল ও গ্যাসের দাম কমতির দিকে, সরকারের ভাড়া বৃদ্ধির নতুন কোন প্রজ্ঞাপন নাই সেখানে এই সময়ে ভাড়া বৃদ্ধি অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য ও গণবিরোধী। এই সিদ্ধান্ত পরিবহন সিন্ডিকেটকে উৎসাহিত করবে। কিন্তু জেলা প্রশাসক ভাড়া বৃদ্ধি করলেন। তার এমন উদ্যোগ তার নৈতিকতা সম্পর্কে আমাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্তটি এখনও ‘বাতিল’ বা ‘প্রত্যাহার’ করেননি, ‘স্থগিত’ করেছেন মাত্র। অর্থাৎ যেকোন সময় আবার তা কার্যকর করার পথ খোলা রেখেছেন।”
গত বছরের এপ্রিলে বিআরটিএ’র পরিবহন ভাড়া নিয়ে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনেরও কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রথীন চক্রবর্তী, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দিপু, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, বাসদের জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের মহানগরের আহ্বায়ক নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থ, সাধারণ সম্পাদক দীনা তাজরীন, উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, সামাজিক সংগঠন সমমনার উপদেষ্টা দুলাল সাহা প্রমুখ।