আওয়ামী লীগের পতন না হলে গ্রেপ্তার হতেন মাসুদুজ্জামান!

গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গ্রেপ্তারের হুমকিতে ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক ও নারায়ণগঞ্জের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা মাসুদুজ্জামান মাসুদ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন না হলে গ্রেপ্তারসহ সরকারের রোষানলে পড়তে হতো তাকে।
আন্দোলন সময়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অর্থদাতা হিসেবে মডেল ডি ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামানসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম উঠে আসে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্কুলজীবনের বন্ধু।
অন্যদিকে মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বহু আগে থেকেই সরকারবিরোধী অবস্থানের কারণে নজরদারি চলছিল। সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে অর্থায়ন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলার খরচ বহন এবং বিভিন্ন সঙ্কটে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা সংস্থা ও নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের কাছে ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী হরতাল কর্মসূচি থেকে মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হলে তার ফোন তল্লাশি করে পুলিশ মাসুদুজ্জামানের অর্থায়নের প্রমাণ পায় এবং তদন্ত শুরু হয়। তবে সরকারের ছয় মাসের মধ্যে পতন ঘটায় সেই তদন্ত আর এগোয়নি।
জুলাই আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জ সফরে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান প্রকাশ্যে এই দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হিসেবে শহরের সংকট মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা রেখে রাজনীতির সম্ভাব্য নতুন মুখ হয়ে উঠেছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তাকে দেখতে চান অনেকেই, আর তিনি নিজেও সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এগোচ্ছেন।
মাসুদুজ্জামানের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বিএনপির সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী হিসেবে গণমাধ্যমের শিরোনাম হতেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও গুঞ্জন উঠেছিল। যদিও তখন বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অংশ হয়ে শরিক দল নাগরিক ঐক্যের নেতা এসএম আকরামকে মনোনীত করেছিল। সর্বশেষ নির্বাচন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বর্জন করায় সেই সুযোগ আর আসেনি। তবে এবার তিনি সরাসরি মাঠে নেমেছেন।
দীর্ঘদিন সমাজসেবায় নিজেকে নিবেদিত রেখে নারায়ণগঞ্জবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন তিনি। করোনাকাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকা এই দানবীর, ক্রীড়া সংগঠক ও শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চায় স্থানীয়রা।
তাকে প্রার্থী দেখতে চেয়ে ইতোমধ্যে রাজনীতির মাঠের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা শুরু করেছেন তার ঘনিষ্ঠ বিএনপির নেতাকর্মীরা। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শতাধিক স্পটে খিচুড়ি বিতরণ, বিশ হাজার মানুষের ঈদ পুনর্মিলনি আয়োজন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে বড় মিছিল এবং ঢাকার বিজয় র্যালিতে শোডাউন—সব মিলিয়ে তিনি নিজের জনপ্রিয়তা ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করেছেন।
বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলছেন, বিএনপির দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে থাকা, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অবদান, ক্লিন ইমেজ ও ব্যাপক জনসমর্থন—এসব কারণেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় এগিয়ে আছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ।