ঘাতকের তরবারির চেয়ে আমাদের সংস্কৃতির শক্তি বেশি: রাব্বি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলাকে ‘পরিকল্পিত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ও চিন্তক রফিউর রাব্বি।
তিনি বলেন, “হাদিকে হত্যা করে এই যে পরিস্থিতি তৈরি করা এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা, এসব কিছুকে আমরা এক হিসেবে দেখছি। এটাকে পরিকল্পিত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে আমরা দেখছি।”
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদী সংস্কৃতি সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এ সমাবেশে গান ও কবিতার মধ্য দিয়ে সম্প্রতি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঊদীচী, ছায়ানট এবং শীর্ষ দুই গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার প্রতিবাদ জানান সংস্কৃতি কর্মীরা।
এ সময় রফিউর রাব্বি বলেন, “নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যখন দেশ একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের পথে যাচ্ছে, তখন এই দেশে বর্বরতা বৃদ্ধি করে, হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র আমরা বুঝতে পারি। যারা আগেও এইসব ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করেছে, আমরা তাদের রুখে দিয়েছি। ইতিহাস যাতে তাদের পক্ষে না যায়, ইতিহাস যাতে মানুষের পক্ষে থাকে সেই আন্দোলন-সংগ্রামের রাস্তায় ছিলাম।”
“এখনো এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই, ঘাতকের বুলেট, ঘাতকের তরবারি যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আমাদের সংস্কৃতির শক্তি তার চেয়ে অনেক অনেক শক্তিশালী। এইটা আমরা বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সময় তার প্রমাণ দিয়েছি”, যোগ করেন তিনি।

গান, কবিতা, চিন্তা ও সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে বুলেটকে মোকাবেলার কথাও বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “এই বর্বরতায় আমরা ভীত হইনি। তারা যতই বর্বর হোক, আমরা তাদের মোকাবেলা করবো আমাদের শক্তি- সাহিত্য ও চিন্তা দিয়ে। অবশ্যই আমরা এই ভূখন্ডে তাদের পরাজিত করবো।”
দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘একটি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান এবং বিকাশ ঘটেছে’ বলেও মন্তব্য করে রফিউর রাব্বি বলেন, “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বিতাড়নের পরে ধর্মীয় একটি ফ্যাসিবাদী আবহ এই দেশে তৈরি হয়েছে।”
এজন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ি করে রফিউর রাব্বি বলেন, “একটি মানবিক ভূখন্ড তৈরি করতে বারবার আমরা সংগ্রাম করেছি, আত্মাহুতি দিয়েছি, রক্তদান করেছি। আমরা সকল মানুষ, ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি মানবিক সমাজ, মানবিক দেশ গড়তে চেয়েছি। স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য।”
“ধর্মের নামে যে হিংসা সারাবিশ্বে করে, আমাদের এই ভূখন্ডে তার অবসান আমরা চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে কাক্সিক্ষত সেই জায়গায় নিতে এই অন্তবর্তী সরকার পদে পদে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের দায়িত্ব হলো- সে নির্বাচিত হোক কিংবা অনির্বাচিত হোক, প্রতিটি মানুষের জান-মালের দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তায়। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর উপর যেভাবে আক্রামণ শুরু হয়েছে, সেই আক্রমণকারীদের প্রতিহত করার উদ্যোগ এই সরকারের ছিল না।”
শরিফ ওসমান হাদির ঘাতকদের দ্রুত বিচারের দাবি করে তিনি বলেন, “সে যে মতের, যে পথেরই হোক না কেন, আমরা এই আততায়ীর মাধ্যমে বর্বর এই হত্যাকাণ্ডের এবং বিচারহীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। এখনো কেন বিচার হলো না, তার জবাব সরকারের কাছে চাই। কীভাবে এই ঘাতক দেশ থেকে পালিয়ে যায়? সরকার-প্রশাসনের ইন্ধন না থাকলে তা সম্ভব হয় না।”
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক দিনা তাজরিনের সঞ্চালনায় শিশু সংগঠক রথিন চক্রবর্তী, সিপিবির সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, মন্টু ঘোষ, সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু, জিয়াউল ইসলাম কাজল, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল প্রমুখ।





































