খুতবায় ইসলামপন্থী আটদলের সমালোচনায় মাওলানা আউয়াল, উত্তেজনা
বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইসলামপন্থী আটদলীয় জোটের কড়া সমালোচনা করেছেন ডিআইটি মসজিদের খতিব ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের খুতবায় তার এ রাজনৈতিক বক্তব্যকে ঘিরে মসজিদের ভেতর সাময়িক উত্তেজনাও দেখা যায়। যদিও অন্যান্য মুসুল্লিদের হস্তক্ষেপে পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তিনি বলেছেন, “আপনি যে ইসলাম চাচ্ছেন, সেই ইসলাম এইভাবে আসবে না কোনদিন। এটা মদিনা ইসলাম নয়, এটা আপনার ইসলাম হইতে পারে, সেকুলার ইসলাম হতে পারে, এটা শরীয়তের ইসলাম নয়। মদিনার ইসলাম এটা নয়।”
মদিনা সনদের কথা উল্লেখ করে এ হেফাজত নেতা বলেন, “মদিনার সনদ খুলে আসেন, দেখেন কী লেখা ছিল। লিখে রাখেন, এ দেশে ইসলামী হুকুমত এইভাবে এ সরকারকে, সুদ, জেনা, মদ, ব্যভিচার ঠিক রাইখা, বাহির রাষ্ট্রের সাপোর্টে এগুলাকে অস্বীকার করবেন; এটা এ দেশে কোনদিন হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “মদিনা ইসলাম কায়েম করতে চাইলে সেভাবে, সে শর্তগুলি পালন করেন। মদিনার ইসলাম কীভাবে কায়েম করে, আপনাদের থেকে দেখতে চাই। এই দেশে সুদ, ঘুষ, জেনা, ব্যভিচার, বেপর্দা চলবে না। মুষ্টিমেয় কয়েকজন স্বপ্ন দেখছেন, এই স্বপ্ন এইভাবে আসবে না।”
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আপনারা বিএনপির কাছে দৌড়াইছেন কেন? কেন লন্ডনে দৌড়াইতেছেন? যোগসাজস করে আল্লাহর নবী কোনদিন কারো সাথে ইসলাম কায়েম করে নাই।”
আটদল ইসলাম উঠিয়ে দিয়েছে মন্তব্য করে মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, “আপনারা ৩০০ জনের মধ্যে ভাগাভাগি করতে গিয়ে নিজেদেরকে ২০০ অমুক দল, শরিকদেরকে ১০০ দিচ্ছেন। তারা আবার বলছে, মানবো না। টানা হেচড়া শুরু করছেন? ফ্যাসিস্ট, সেকুলারদের সাথে যোগ করে দেখাইতে চান। কোনদিন সম্ভব হবে না। সংখ্যায় ৯৫ নয় ৯৬, ৯৮ পার্সেন্ট মানুষ ভালো করে বুঝে, ইসলাম কায়েম হলে, স্বাধীনভাবে চলার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। মদের লাইসেন্স পাবে না, ঘুষ চলবে না। চুরি প্রমাণ পাইলে হাত কেটে দেওয়া হবে। জেনা করলে সঙ্গেসার করে দেওয়া হবে।”
আব্দুল আউয়াল বলেন, “এখন আট দল, অমুক-তমুক দল ইসলামের নামে আমরা স্লোগান দিচ্ছি। কিছু কিছু মানুষ তৃতীয় মুখ দেখতে চায়। সেটা খুব মাইনর একটা সংখ্যা। বাহির রাষ্ট্রওয়ালারা ইসলাম বিদ্বেষী যারা আছে, তারা স্বীকৃতি প্রদান করবে না। যেমনটা আফগানিস্তানকে এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দিচ্ছে না। ইসলামী রাষ্ট্র বানাইতে চান বিভিন্ন রকমের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি দুইটা থাপ্পড় দিয়ে আপনাকে ফিনিশ করে দিবে। নারীদেরকে স্বাধীনতা, বেপর্দায় চলাফেরা, হোস্টেলে মনের মানুষের সাথে রাত্রি যাপন করবে, এটা হতে দিবেন না আর বাহির রাষ্ট্রওয়ালা ইসলাম বিদ্বেষীওয়ালারা আপনাকে পুতুলের মত আরামে বইসা বইসা সহযোগিতা করবো তা তো কোনদিন হতে পারে না। ক্ষমতায় যাওয়ার পরে ইসলাম ইসলাম যতই বলি আমরা সত্যিকার ইসলাম এই দেশে কায়েম করতে পারবো না। বাধার কারণে টিকে থাকতে পারবেন না।”
তিনি আরও বলেন, “মনে করছেন, সেকুলার রাজনীতি করে তাদের সাথে একটা যোগসাজসে কমপক্ষে কিছু আসন পাইলেও তো একটু চেষ্টা করব। আমরা একটা বিরোধী দল হয়ে থাকলাম। সেকুলার রাজনীতিতে বিশ্বাসী হয়ে গেলাম। এইভাবে দৌড়ঝাপ দিচ্ছে এখন অনেক ইসলামী দলেরা। ওসমান হাদিকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হত্যা করা হয়েছে। আগামীদিনে এই দেশের ‘র’ এমনটা করবে আপনার পাশের বন্ধুই বন্দুক নিয়ে আসবে। যারা ইসলামী হুকুমত বানাইতে চায় তাদের গুলির আওতায় নিয়ে আসবে তারা। ছেড়ে দিবে না আপনাকে।“
অনেকের সুর পাল্টে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বড় মিয়ারা চাপ দিতেছে, ইসলাম যদি কায়েম করতে চাস তাইলে আমাদের সহযোগিতা পাবি না। সরাসরি ইসলামী নাম না দিয়া সেকুলার রাজনীতি করতে চাইলে পারো। ব্যাংক, সুদ, জেনা, ব্যভিচার, মদ সব চলবে, খেলা, নাচ-গান, বাউলরা চলবে অর্থাৎ যত অশ্লীলতা আছে সবকিছু চলবে। এগুলার মধ্যে হস্তক্ষাপ করবা না। ওদিকে চোখ উঠাইবা আর চোখ উঠাইয়ে নিব। কঠিন অবস্থায় আছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশ আফগানিস্তানের মত বানাইবেন? যেখানে ৮ লক্ষের উপরে শহীদ হইছিল। এবং তারা তাদের ঐক্যের উপরে অটল হয়ে নিজের সম্পদ নিয়ে টিকে আছে। কিন্তু সারাবিশ্বের কোন মোড়লরা তাদেরকে সাপোর্ট করে না। তখনই আপনিই বলবে, বাহির রাষ্ট্রের সহযোগিতা নাই, গার্মেন্টস শিল্পগুলি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বাহিরের থেকে আসে না। সব চলে গেছে আশপাশ দেশে। এই দেশ দিয়ে আমাদের কি লাভ? এই ইসলাম দিয়ে আমার কি লাভ? ইসলাম, ইসলামী হুকুমত এত সহজ ব্যাপার না। অনেক কঠিন মাসালা।”





































