২২ নভেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২১ নভেম্বর ২০২৫

ভূমিকম্পে শিশু নিহত, আহত স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন স্বামী

ভূমিকম্পে শিশু নিহত, আহত স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন স্বামী

শিশু দুই সন্তান নিয়ে আনন্দেই দিন কাটছিল আব্দুল হক ও কুলসম বেমগ দম্পতির। বয়স হলে দুʼজনকে মাদ্রাসায় পড়ানোরও পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু সকালের ভূমিকম্পে ওলট-পালট হয়ে গেছে তাদের পরিবার।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ভূমিকম্পে বাড়ির পাশের এক উচু দেয়াল ধসে মারা যায় এ দম্পতির ১০ মাসের কন্যা ফাতেমা। গুরুতর আহত হন ফাতেমার মা কুলসুম (৩০) ও তাদের আরেক প্রতিবেশী নারী জেসমিন আক্তার (৩৫)।

প্রতিবেশী ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার সময় ফাতেমা ছিল মায়ের কোলে। ধসে পড়া ইট সরিয়ে শিশুটির মরদেহ বের করেন তারা। মা ছিলেন তখন সঙ্গাহীন।

বিকেলে বাড়ির পাশে শিশুটির জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়। বাবা-মার অনুপস্থিতিতেই মরদেহে দাফন করতে বাধ্য হন স্বজনরা।

কন্যার দাফনে আব্দুল হকের থাকতে না পারার কারণ জানালেন ফাতেমার খালু মোহাম্মদ হোসেন।

তিনি বলেন, তার ভায়রা (ফাতেমার বাবা) আব্দুল হক তার স্ত্রীকে নিয়ে দুপুর থেকে হাসপাতালে-হাসপাতালে ঘুরছেন। এখন পর্যন্ত তিনটি হাসপাতালে গেলেও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। দুʼটি হাসপাতালে শয্যা না থাকার কথা ভর্তি নেওয়া হয়নি।

শুরুতে রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাবে নেওয়া হয় কুলসুমকে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার পর শয্যা না থাকার কথা জানোন হয় স্বজনদের। পরে তারা ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রোগীকে ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশের কথা জানান মোহাম্মদ হোসেন। 

“দুপুর থেইকা আমরা ঘুরতেছি। ঢাকে মেডিকেবে খালি ওয়াশ কইরা ব্যান্ডেজ কইরা বলে সিট নাই, বাড়িতে নিয়ে যেতে। কিন্তু মাথায় এমন আঘাত পাওয়া রোগী যার কোনো হুশ নাই, কথা বলতে পারে না, তারে কেমনে বাড়িতে নেই। কিন্তু ভাই কোথাও ভর্তি করাতে পারতেছি না।”

ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে তিনি বলেন, “আমরা গরীব মানুষ, ক্ষমতা নাই। নাইলে তিনটা জায়গায় গিয়াও চিকিৎসা কেন পামু না? আমার সোনার বাংলাদেশে গরীবের চিকিৎসা নাই।”

চিকিৎসকের পরামর্শে এখন তারা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে যাবার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় আছেন।

“ওই হাসপাতালে যাওয়া পর্যন্ত আমার শালি বাঁচে কিনা শিওর না”, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে অপরাপ্রান্ত থেকে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলছিলেন হোসেন।

দেয়ালটি কোনো রড-পিলার ছাড়াই অস্বাভাবিক উচু ছিল: ইউএনও

দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। তার সঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগের সদস্যরাও ছিলেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে পরিষদের এক গ্রামটিতে বহুতল ভবন নেই। অধিকাংশই একতলা কিংবা দোতলা, যা নিয়ম ও নকশা মেনে নির্মিত হয়নি।

স্থানীয়রা বলেন, ৫ নম্বর ক্যানেলপাড় বলে পরিচিত এলাকাটি ছিল নিচু জলাভূমির মতো। গত দুই দশকে নিচু জমি ভরাট করে এখানে ঘনবসতি গড়ে ওঠে।

ঘটনাটিকে “ন্যাচারাল ডিজাস্টার” উল্লেখ করে ইউএনও জানান, যে দেয়ালটি ধসে পড়েছে সেটির কোনো পিলার ছিল না। এমনকি রডের ব্যবহার না থাকলেও অস্বাভাবিক রকমের উঁচু করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, “প্রাচীরটি অন্তত দশ ফুট উঁচু ছিল কিন্তু কোনো রডের কাজ সেখানে নেই, এমনকি উঁচু দেয়ালের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোনো পিলারও ছিল না। ইউপি এলাকাগুলোতে অনেকে নিয়ম-কানুন মেনে স্ট্রাকচার নির্মাণ করেন না। সেখামে তদারকিরও কিছু ঘাটতি আছে। কিন্তু আমরা আগামীকাল মাইকিং করে দেবো। গ্রাম-পুলিশকে এ ধরনের অস্বাভাবিক রকম উঁচু দেয়াল বা অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে তদারকি করার জন্য। রিস্কি দেয়ালগুলো আমরা ভেঙে দেবো।”

নিহতের পরিবারকে দাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারেও সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু কুলসুমের হাসপাতালে এখনো ভর্তি করতে না পারার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও সাইফুল বলেন, “স্বজনরা জানিয়েছিলেন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তারা যে শয্যা পাচ্ছেন না বা কোথাও এখনো ভর্তি হতে পারেনি, এটা জানা ছিল না। হয়তো ইনফরমেশন গ্যাপ হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্ছা নিচ্ছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও কিন্তু তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে প্রায়োরিটি রয়েছে।”

সিদ্ধিরগঞ্জে তিনটি ভবন হেলে পড়েছে, কয়েকটিতে ফাটল

সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিং এলাকায় তিন ভবন হেলে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক রিপন মাহমুদ আকাশ।

ওই আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আকাশ বলেন, “তিনটি ভবন কাত হয়ে পড়েছে। আরও কয়েকটিতে ফাটল দেখা গেছে।”

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল আবাসিক এলাকা, আল ইসলাম নগর, রনি সিটিতেও কয়েকটি ভবনে ফাটল দেখা গেছে।

সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকার সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভবনেও বড় ফাটল দেখা গেছে। দুʼটি ভবনের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পাশের টিনসেডের দুʼটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

আদমজী ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার মিরণ মিয়া বলেন, “কয়েকটি ভবনে ফাটল ও হেলে যাবার খবর পেয়েছি। এগুলো নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসন কাজ করছে।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়