নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত না হবার আহ্বান মাসুদুজ্জামানের
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ‘বিভ্রান্ত’ ও ‘বিচলিত’ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আসনটিতে দল মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত দলের প্রার্থিতা অপরিবর্তিত থাকবে বলেও জানান তিনি।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) নিজ ফেসবুক একাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ নির্দেশনা দেন তিনি।
মাসুদুজ্জামান নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বিচলিত না হই, মনটাকে শান্ত রাখুন।”
নির্বাচনী প্রচারের জন্য তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ‘মাসুদুজ্জামান সমর্থক’-এ তিনি লিখেছেন, “অফিসিয়াল নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত দলের প্রার্থিতা অপরিবর্তিত রয়েছে। কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।”
মাসুদুজ্জামান মাসুদ এক সময় যুবদলের সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন। পরে ব্যবসায় ঢুকে পড়ায় রাজনীতির মাঠে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে সময় দেননি, তবে দল ও নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন। সমাজসেবা ও শিক্ষাঙ্গণে অবদান রাখা ছাড়াও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দেশজুড়ে তার পরিচিতি রয়েছে। গত বছরের গণঅভ্যুত্থানেও তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে জানান বিএনপির নেতারা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী মাসুদুজ্জামান গত সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। পরে গত ৩ নভেম্বর বিএনপি সারাদেশের ২৩৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে। ওইদিন নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম প্রকাশ করে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দল মাসুদুজ্জামানকে মনোনীত করে।
কিন্তু বিপত্তি বাঁধে গত ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে ডাকা জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামান মাসুদের এক ঘোষণার পর। তিনি ওইদিন বলেন, পরিবারের সদস্যরা তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দলীয় প্রার্থীর হঠাৎ এমন ঘোষণায় হতবাক হয়ে পড়েন নেতা-কর্মীরা। তারা মাসুদের এমন সিদ্ধান্তের তাৎক্ষনিক প্রতিবাদও জানান। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভাও করেন। পরে তারা গত শুক্রবার বিকেলে নগরীর তল্লা এলাকায় অবস্থিত মাসুদুজ্জামান মাসুদের পোশাক কারখানা মডেল ডি ক্যাপিটালের সামনে জড়ো হন। নেতা-কর্মীদের চাপে আবারও নির্বাচন করার ঘোষণা দেন মাসুদ।
তিনি বলেন, “আমার নির্বাচন না করার ঘোষণায় দলের নেতা-কর্মীরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। আমি সকলের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। যে ভালোবাসা আপনাদের মাধ্যমে আমি পেয়েছি, তাতে আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলাম।”
এদিকে, নির্বাচনী মাঠে নামার পর থেকেই দলীয় শীর্ষ নেতাদের বিরোধীতার মুখে পড়তে হয় মাসুদুজ্জামানকে। কেননা, আসনটিতে তিনি ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তারা ছাড়াও, মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ ও শিক্ষক আলিয়ার হোসেন। তারা সকলেই নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় ছিলেন।
কিন্তু ৩ নভেম্বর আসনটিতে মাসুদের নাম ঘোষণার পর তাকে সমর্থন দিয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন খোরশেদ ও আলিয়ার। কিন্তু অপর চার নেতা- কালাম, সাখাওয়াত, টিপু ও বাবুল একজোট হয়ে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকেন। তারা এক সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিলেরও দাবি জানান।
এ নেতাদের একাধিকবার রাজধানীতে দলীয় কার্যালয়ে ডেকে ধানের শীষের ঘোষিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনাও দেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে আবু আল ইউসুফ খান টিপু সক্রিয়ভাবে মাসুদুজ্জামানের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়া শুরু করেন। কিন্তু বাকি তিন নেতা বিরোধীতার চর্চা বজায় রাখেন।
এদিকে, সাখাওয়াত হোসেন খান শনিবার দাবি করেছেন, দল তাকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে নির্বাচন করার নির্দেশনা দিয়েছে। তিনিই আসনটিতে ধানের শীষের প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন তিনি।
যদিও মনোনয়ন পরিবর্তনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেয়নি। এদিকে, সাখাওয়াত ও তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনোনয়ন পরিবর্তনের প্রচার দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।
এ বিভ্রান্তি কাটাতেই মাসুদুজ্জামান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন বলে দাবি তার অনুসারী নেতাদের।





































