২৮ আগস্ট ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ:

প্রকাশিত: ২২:০৫, ২৭ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ২৩:৫০, ২৭ আগস্ট ২০২৫

রাত পোহালে বার নির্বাচনের ভোট, আলোচনায় শীর্ষ দুই পদ

রাত পোহালে বার নির্বাচনের ভোট, আলোচনায় শীর্ষ দুই পদ

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির (২০২৫-২৬) কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট)। সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সমিতি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভোট দেবেন ১১৭৩ জন আইনজীবী।

এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনটি প্যানেল ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে ভোটারদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে শীর্ষ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা—যেখানে ভাগ বসাতে পারে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বাইরে থাকা দুই প্যানেল। গত কয়েকদিনে আদালতপাড়ার আলাপে এ বিষয়টিই আইনজীবীদের মধ্যে এ আলাপ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। 

গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী নেতারা আদালতে আসা বন্ধ হলে তাদের নেতৃত্বের কার্যকরী কমিটি ভেঙে দিয়ে বিএনপির দুই আইনজীবী নেতা— সরকার হুমায়ূন কবির ও এইচএম আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে নির্বাচন ছাড়াই নতুন পরিষদ গঠন করা হয়।

গত ৭ আগস্ট সংগঠনটির বার্ষিক সাধারণ সভায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনটি প্যানেলের প্রার্থীরা।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম (নীল প্যানেল): সভাপতি পদে এড. সরকার হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক পদে এড. এইচ. এম. আনোয়ার প্রধান।

জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল (সবুজ প্যানেল): সভাপতি পদে অ্যাড. এ. হাফিজ মোল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাড. মো. মাঈন উদ্দিন মিয়া।

আইনজীবী ঐক্য পরিষদ (রেজা-গালিব প্যানেল): সভাপতি পদে অ্যাড. রেজাউল করিম খান রেজা, সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাড. শেখ মো. গোলাম মোর্শেদ গালিব।

এ তিন প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন অ্যাড. মোহাম্মদ আলী। 

এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো একক প্যানেল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের একটি অংশ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান, যিনি বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের একটি অংশের নেতা— তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মূল ফোরাম থেকে সরে গিয়ে রেজা-গালিব প্যানেল গঠন করেছেন। ফলে ত্রিমুখী লড়াই নিশ্চিত হয়েছে।

ভোটের আগের দিনগুলোতে আদালতপাড়ায় ছিল আলোচনা-সমালোচনায় মুখর পরিবেশ। প্রচারণার শেষ দিনেও নীল প্যানেলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও হুমকির অভিযোগ করেন জামায়াতপন্থীরা। অপরদিকে ঐক্য পরিষদ অভিযোগ তোলে, তাদের প্রার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি ও ভোট কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে। এসব কারণে শেষ মুহূর্তে ঐক্য পরিষদের দুই প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরেও দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার সময় দলীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শের পর এমন সিদ্ধান্তে আসার কথাও জানিয়েছেন তারা। ফলে বিদ্রোহী প্যানেলের “প্রার্থীদের উপর চাপ” অভিযোগটি জোর পায়।

নির্বাচনের নানা সমীকরণ ও ভোটারদের মধ্য থেকে ওঠা গুঞ্জন বলছে, বৃহস্পতিবারের ভোটে শীর্ষ— সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দুʼটিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আওয়ামী লীগহীন ভোটের মাঠে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রার্থীরা আপাত দৃষ্টিতে শক্তিশালী। তবে শীর্ষপদে আশাহত হতে পারেন এ প্যানেলের প্রার্থীরা। ভোটের সমীকরণে পদ দুʼটিতে ভাগ বসাতে পারে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছাড়াও জামায়াত সমর্থিত এবং রেজা-গালিব প্যানেলের প্রার্থীরা। এছাড়া সিনিয়র আইনজীবীদের অনেকে মনে করেন পূর্ণ প্যানেলে জয়ের সম্ভাবনা কম। ভোটের মাঠে তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে এককভাবে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

ভোটের হিসেবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আনোয়ার প্রধান শক্ত অবস্থান নিয়ে এগিয়ে থাতলেও সভাপতি পদে হুমায়ূন কবিরের পথ সহজ নয় বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। 

কিন্তু নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে জয়ের আশা ও ভোটের মাঠের পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টির কথ২ জানিয়েছে বিএনপি সমর্থিত পার্থীরা।

এদিকে, ৫ আগস্টের পর আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা বারে না আসলেও ভোটের মাঠে আলোচনায় রয়েছে তাদের সমর্থিত ভোটাররা। এর মধ্যে অনেক প্রার্থীরাই চেষ্টা করেছেন তাদের মন জোগাতে। ভোটের ফলাফলে তাদের প্রভাব থাকার কারণে অনেক প্রার্থীকেই তৎপর দেখা গেছে। অনেকে আদালতে নির্দ্ধিধায় মামলা পরিচালনা করার আশ্বাস প্রদান করে ভোট প্রার্থনাও করেছেন। 

এই নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদপ্রার্থী এড.সরকার হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক পদে এড. এইচ. এম. আনোয়ার প্রধান, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি প্রার্থী এড.কাজী আব্দুল গাফ্ফার, সহসভাপতি প্রার্থী এড. সাদ্দাম হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড.ওমর ফারুক নয়ন, কোষাধ্যক্ষ প্রার্থী এড.শাহাজাদা দেওয়ান, আপ্যায়ন সম্পাদক প্রার্থী এড. মাইন উদ্দিন রেজা, লাইব্রেরি সম্পাদক প্রার্থী এড.হাবিবুর রহমান, ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী এড. আমিনুল ইসলাম, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রার্থী এড. সারোয়ার জাহান, সমাজসেবা সম্পাদক প্রার্থী এড. রাজিব মন্ডল, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক প্রার্থী এড.মামুন মাহমুদ, কার্যকরী সদস্য প্রার্থী এড.আনিসুর রহমান, এড.ফাতেমা আক্তার সুইটি, এড.তেহসিন হাসান দিপু, এড.দেওয়ান আশরাফুল ইসলাম ও এড.আবু রায়হান।

সভাপতি পদে এড. এ. হাফিজ মোল্লাহ, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে এড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর দেওয়ান, সহ-সভাপতি পদে  এড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক পদে এড. মোহা. মাঈন উদ্দিন মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে এড. আল আমিন, কোষাধ্যক্ষ পদে এড. ইস্রাফিল, আপ্যায়ন সম্পাদক পদে এড. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, লাইব্রেরি সম্পাদক পদে এড. মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার, ক্রীড়া সম্পাদক পদে এড. ইমরান হোসেন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে এড. মো. মজিবুর রহমান, সমাজসেবা সম্পাদক পদে এড. নূরে আলম, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে অ্যাড. মাসুদুর রহমান। 

এছাড়া সদস্য পদে পাঁচ প্রার্থী হলেন-  এড. গোলাম মোস্তফা, এড. আফরোজা জাহান, এড. রাকিবুল হাসান, এড. সাইফুল ইসলাম ও এড. তাওফিকুল ইসলাম।

আআইনজীবী ঐক্য পরিষদের রেজা-গালিব নেতৃত্বাধীন প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন,সভাপতি এড. রেজাউল করিম খান রেজা, সাধারণ সম্পাদক এড. শেখ মো. গোলাম মোর্শেদ গালিব, সিনিয়র সহ-সভাপতি এড. সামসুজ্জামান খোকা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. মো. আব্দুল মোমেন, কোষাধ্যক্ষ এড. মো আফজাল হোসেন, লাইব্রেরি সম্পাদক এড. আলী আজম, ক্রীড়া সম্পাদক এড. শহীদ সারওয়ার, সাহিত্য ও সাংস্কৃতি এড. নার্গিস পারভীন, সমাজসেবা সম্পাদক এড.শাহনাজ পারভীন হিরা, আইন ও মানবাধিকার এড. মনি গাঙ্গুলী।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া। কমিশনের অন্যরা হলেন- এডভোকেট বোরহানউদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা, এডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক, এডভোকেট সুমন মিয়া ও এডভোকেট মতিউর রহমান মতিন।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়