২৬ আগস্ট ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:১৪, ২৫ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ২২:৫৯, ২৫ আগস্ট ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের তিন আসনের সীমানা শুনানি মঙ্গলবার, পক্ষে-বিপক্ষে যারা

নারায়ণগঞ্জের তিন আসনের সীমানা শুনানি মঙ্গলবার, পক্ষে-বিপক্ষে যারা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শুনানি ২৬ আগস্ট (মঙ্গলবার)। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন ভবন অডিটোরিয়ামে। তিনটি আসনের শুনানিতে অংশ নিবেন নারায়ণগঞ্জের অন্তত ১৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতারা। 

গত ৩০ জুলাই ইসি প্রকাশিত প্রস্তাবিত খসড়ায় নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসন— ৩, ৪ ও ৫-এর সীমানা পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়। ইসির সুপারিশ অনুযায়ী, সোনারগাঁও উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে বন্দর উপজেলা। এতে সোনারগাঁওয়ের দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার পাশাপাশি বন্দরের পাঁচটি ইউনিয়নও যুক্ত হবে। এ পাঁচটি ইউনিয়ন বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওতায় রয়েছে।

নতুন খসড়ায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাদ পড়ছে সদর উপজেলার গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়ন। তবে যুক্ত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের নয়টি ওয়ার্ড। ইসির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সবগুলো ২৭টি ওয়ার্ডকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠিত হবে সদর উপজেলার ফতুল্লা, কাশিপুর, কুতুবপুর, বক্তাবলী ও এনায়েতনগর ইউনিয়ন এবং নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে। তবে নতুন খসড়ায় এ আসনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে সদর উপজেলার গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়ন। এর ফলে সিদ্ধিরগঞ্জের নয়টি ওয়ার্ড বাদ যাবে, যা যাবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওতায়।

খসড়া প্রকাশের পর নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক নেতারা ১০ আগস্ট পর্যন্ত আপত্তি জানানোর সুযোগ পান। 

নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা বাতিলের পক্ষে আবেদন করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ।  

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মাদ গিয়াসউদ্দিন ঘনিষ্ঠ সোনারগাঁয়ের যুবদল নেতা আশরাফুল আলম আশরাফ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম ও যুবদল নেতা মোহাম্মদ শাহ আলম মুকুল সোনারগাঁও উপজেলা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অন্তর্গত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ১০ নং ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন এবং বন্দর উপজেলা ও  নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১১ থেকে ২৭ নং ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন গঠনের আবেদন করেছেন। 

মো. দেলোয়ার হোসেন ও আনিস সিকদার নামের দুই ব্যক্তি সোনারগাঁও উপজেলা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অন্তর্গত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ১০ নং ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন এবং বন্দর উপজেলা ও  নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১১ থেকে ২৭ নং ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন গঠনের আবেদন করেছেন। 

ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লিটন ও ফতুল্লার কুতুবপুর এলাকার রাফসানজানী খান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত প্রস্তাবনার পক্ষে আবেদন করেছেন। 

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এড. আবুল কালাম, তার মেয়ে এড. সামছুন নুর বাঁধন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ ও আমরা বন্দরবাসী সংগঠনের সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার সাঈদ বন্দর থানাকে দুইটি আলাদা সংসদীয় আসনে বিভক্ত না করে নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনের সীমানা পূর্বের ন্যায় বহাল রাখার পক্ষে আবেদন করেন।

সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ প্রস্তাবনার বিপক্ষে বন্দর উপজেলাকে নারায়ণগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনে অন্তর্ভুক্তির আবেদন করেন। 

এবি পার্টির ঢাকা বিভাগের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান বেপারী নারায়ণগঞ্জ-৩ ও ৫ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত আবেদন করেন। 

মো. নাছির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি সোনারগাঁও উপজেলা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অন্তর্গত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ১০ নং ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন এবং বন্দর উপজেলা ও  নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১১ থেকে ২৭ নং ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন গঠনের আবেদন। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. মোহাম্মদ আলম খান বন্দর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার ২ ইউনিয়নকে  নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেন। 

মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এড. মো. শরীফুল ইসলাম শিপলু ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলের ছেলে ব্যারিস্টার রিদওয়ানুর রহমান রিকু বন্দর উপজেলাকে অখণ্ড রেখে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেন। 

মঙ্গলবারের শুনানিতে এসব প্রস্তাব ও আপত্তি নিয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের নেতারা মনে করছেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণে স্থানীয় জনমত ও ভৌগোলিক বাস্তবতা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা জরুরি। শুনানির পর কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আসতে পারে বড় ধরনের পরিবর্তন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়