০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৪০, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

‘ওসমান অনুসারীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে পুরোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত’

‘ওসমান অনুসারীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে পুরোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত’

গণঅভ্যুত্থানের পর নারায়ণগঞ্জে গুম-খুন-সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ওসমান পরিবারের উল্লেখযোগ্য অংশ পালিয়ে গেলেও তাদের অনুসারীরা ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ঢুকে পুরোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি।

তিনি আরও বলেন, এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের আকাক্সক্ষায় দল-মত, ডান-বাম নির্বিশেষে সম্মিলিতভাবে রাস্তায় নেমে ফ্যাসিবাদী, স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ও নারায়ণগঞ্জে খুন-সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে পালিয়ে গেলেও তাদের অনুসারীরা রয়ে গেছে। এবং তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় মিশে গিয়ে পুরোনো অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। ফ্যাসিস্টের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তন না হওয়ার কারণে জন-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

সোমবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৫৩ মাস উপলক্ষে আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি।

গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতির পরও দীর্ঘবছর আটকে থাকা নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত ত্বকীর পিতা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর যে কয়েকটি হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার একটি ছিল ত্বকী হত্যাকাণ্ড। কিন্তু এই মামলার ৯৯ বার আদালতে তারিখ গেলেও তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব অভিযোগপত্র দাখিল করেনি। এই তারিখ শত হওয়ার আগেই ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র দাখিলের দাবি জানান তিনি।

রাব্বি বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, আজমেরী ও শাহ নিজামসহ সকলকে অভিযোগপত্রে যুক্ত করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই সরকারের ত্বকী হত্যার বিরুদ্ধে কোন দুরভিসন্ধি নাই, সুতরাং এই সরকার ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র দ্রুত দেবে এইটি আমাদের আকাঙ্ক্ষা।”

রফিউর রাব্বি বলেন, “ত্বকী হত্যার ১৫৩ মাস অতিক্রান্ত হচ্ছে। আমরা ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, বুলু, মিঠু- যাদেরকে এই ওসমান পরিবার হত্যা করেছে, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছি। কিন্তু কোনো হত্যার সুরাহা হয় নাই। আমরা সাগর-রুনি, তনু, মিতু হত্যারও বিচার চেয়েছি। এসব হত্যারও কোন কুল-কিনারা হয় নাই।”

“শেখ হাসিনা আয়নাঘর তৈরি করে শত শত মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে। আয়নাঘর দৃশ্যমান বন্ধ হলেও বিভিন্ন জায়গায় আবার আমরা টর্চারসেল তৈরি হওয়ার সংবাদ পাচ্ছি। এই নারায়ণগঞ্জে এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যারা এই চব্বিশে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করছে, না দিলে মামলায় ঢুকানোর হুমকি দিচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেককে ঢুকিয়েছে তারা। অর্থাৎ টাকা খাওয়ার এই যে ফন্দি-ফিকির, যেটি আওয়ামী লীগ করেছে দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর, ঠিক একইভাবে আজকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো করছে। প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা এসব জানে। আমরা আশা করছি এসবের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা আগামী ফেব্রুয়ারি নির্বাচন আয়োজন করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

শেখ হাসিনার শাসনামলে নারায়ণগঞ্জে ‘আইয়ামে জাহেলিয়াতের’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মন্তব্য করে রাব্বি বলেন, “খুন, হত্যা, রাহাজানি, চাদাবাজি, দখলদারিত্বের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। এই শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় তার স্নেহধন্য ওসমান পরিবারের এসব কর্মকাণ্ডের সমস্ত কিছুই তার জানা ছিল। তারপরও তিনি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এসব অরাজকতার পৃষ্ঠপোষক হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন ছিল এই ওসমান পরিবারের পক্ষে। ত্বকী হত্যাকারীদের তারা গ্রেপ্তার তো করেইনি বরং প্রশাসন এদেরকে বীর দর্পে চলাফেরা করার করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।”

“এই সরকার ১৬ মাস ধরে ক্ষমতায়। এই সরকারের দৃশ্যমান কিছু অগ্রগতি থাকলেও হাসিনার ভঙ্গুর বিচার-ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র কাঠামোকে তারা ফিরিয়ে আনতে পারেন নাই। ফলে প্রশাসনের দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেও তারা সে দায়িত্ব পালন করতে না পারায় জেলায়-জেলায় মব সংস্কৃতি চলছে, মব জাস্টিসের মধ্য দিয়ে মানুষের মৌলিক অধিকার ভুলণ্ঠিত হচ্ছে।”

এ সময় ত্বকী হত্যার বিচারের পাশাপাশি ‘নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা’ সাবেক সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মুক্তির দাবি জানান নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুবুর রহমান মাসুম।

তিনি বলেন, “সরকারি দলের একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও আইভী ওসমান পরিবারের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। সাত-খুন, ত্বকী হত্যাসহ গুম-খুনের বিরুদ্ধে এই নারী সাহসের সঙ্গে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই নারী আজ জেলখানায়। পাঁচটি মামলায় হাই কোর্ট জামিন দিলেও আরও পাঁচটি মিথ্যা মামলায় তাকে জড়িত করা হয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এইসব মামলা দিচ্ছে।”

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক দিনা তাজরিনের সঞ্চালনায় এ আলোক-প্রজ্বালন কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা, সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, জাহিদুল হক দিপু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল প্রমুখ।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়