উদ্ধার অভিযান জোরদারের দাবি
প্রকাশ্যে গুলি–অস্ত্রের ঘটনায় শঙ্কিত নগরবাসী
জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জে একের পর এক ঘটনায় প্রকাশ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি চালানোর ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এসব ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ঘটনার অস্ত্র উদ্ধার কিংবা অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নগরবাসীর শঙ্কা আরও গভীর হচ্ছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রতি নির্বাচনে কিছু অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার দেখা গেলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঝুঁকি আরও বেশি। তারা মনে করছেন— প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার পরও অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে পুলিশের দাবি— জুলাই আন্দোলনের পর থেকে জনসাধারণের সহযোগিতা না পাওয়ায় তদন্ত ও অস্ত্র উদ্ধার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে নির্বাচনকে ঘিরে তাদের তৎপরতা আরও জোরালো করা হবে বলে জানায় পুলিশ প্রশাসন।
৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে প্রথম প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে ২২ সেপ্টেম্বর। এদিন শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বন্ধন পরিবহন দখলকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান ও মহানগর বিএনপির সদস্য মাহবুবুল্লাহ তপনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলি চলার ঘটনা ঘটে। উভয়পক্ষই লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি হয়।
এরপর চলতি বছরের ৬ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ইপিজেডের ঝুট ব্যবসা দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলি চলে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সোয়া চারটার দিকে ইউনিভার্সাল ম্যানসওয়্যার লিমিটেডের সামনে দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চলতি নভেম্বর মাসে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরপর চারটি গুলি ছোড়ার ঘটনা আতঙ্ক বাড়িয়েছে। এর মধ্যে এক ঘটনায় এক গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
১৫ নভেম্বর শহরের মাসদাইরে মোবাইল ফোন নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে কৃষকদল নেতা নাহেদুর রহমান পারভেজকে মারধর, ছুরিকাঘাত এবং প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজে এক ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা যায়। হামলার পরদিন র্যাব অভিযানে গেলে জাহিদ ও তার সহযোগীদের গুলিতে জবা আক্তার (২২) নামে এক গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ হন।
১৮ নভেম্বর রাত আটটার দিকে সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনের গলিতে ইন্টারনেট ব্যবসার বিরোধের জেরে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়ার ওপর হামলা ও প্রকাশ্যে গুলি ছোড়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকজন সন্ত্রাসী তাকে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেয় এবং পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তিনি গুলিবিদ্ধ হননি।
একইদিন মাদক ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে আমলাপাড়া এলাকায় এক বাড়িতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নজরদারি আরও জোরালো করা হবে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তরিক আল মেহেদী বলেন, “অস্ত্র উদ্ধারে আমরা তৎপর। নির্বাচন ঘিরে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী—সব বাহিনীই যৌথভাবে কাজ করবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে— তেমন পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেটি নিশ্চিত করতেই আমরা প্রস্তুত আছি।”





































