০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:১২, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপিতে ঢোকার পাঁয়তারা ওসমান-ঘনিষ্ঠ শিখন সরকারের

বিএনপিতে ঢোকার পাঁয়তারা ওসমান-ঘনিষ্ঠ শিখন সরকারের

নারায়ণগঞ্জ শহরে ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা শিখন সরকার শিপন এখন বিএনপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। ওসমান-ঘনিষ্ঠতার কারণে দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা শিখন গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপির লোকজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেছেন। ইতোমধ্যে তাকে বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন, অপেক্ষা করছেন সরাসরি দলটিতে অংশগ্রহণ করার। এ নিয়ে বিএনপির তৃণমূলেও রয়েছে তীব্র ক্ষোভ।

স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের অপকর্মের অংশীদার হিসেবে যে লোকের গ্রেপ্তার হয়ে জেলে থাকার কথা ছিল তিনি বরং বিএনপির কয়েকজনের আস্থাভাজন হয়ে এখন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। তাকে নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যেও রয়েছে ক্ষোভ। তারা ওসমান-ঘনিষ্ঠ এই নেতাকে নেতৃত্বে চান বলেও জানিয়েছেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শিখন সরকার ৫ আগস্টের পর থেকেই নিজের ভোল পাল্টানোর চেষ্টায় ছিলেন। তাকে সহযোগিতা করেছেন মহানগর বিএনপির কয়েকজন নেতা। নিশ্চয়ই তারা ওসমান পরিবারের মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপ্ত না হলে এই ধরনের একটি লোককে নারায়ণগঞ্জে পুনর্বাসন করার কোনো কারণ নেই। আমরা হিন্দু কমিউনিটির লোকজন তাকে ইতোমধ্যেই বয়কট করেছি।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওসমান ঘনিষ্ঠদের অনেকেই গণঅভ্যুত্থানের পর শহর ছেড়ে পালালেও শিখন সরকার শিপন ছিলেন প্রকাশ্যে। এক সময় আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী হিসেবে পরিচিত শিখন এখন বিএনপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বিশেষ করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সঙ্গে শিখন ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ শিখন এখনও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী অবস্থানে আছেন।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছেন, এমনকি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতে চাইছেন শিখন সরকার শিপন। তাকে এই কাজে সহযোগিতা করছেন বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়া শিখন সরকার শিপন ছিলেন ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানদের হয়ে পূজা মণ্ডপে গিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে ভোট প্রার্থনা, আওয়ামী লীগের মিছিলে অংশগ্রহণ কিংবা নানা কার্যক্রমে সক্রিয় থাকা ছিল তার নিয়মিত কাজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো এসব কার্যক্রমের ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মুখ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আনোয়ার হোসেন সভাপতি ও অ্যাডভোকেট খোকন সাহা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করলে, শিখন সেই কমিটিতে জায়গা পান। ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাকে কার্যকরী সদস্য পদে রাখা হয়।  এর আগে বিলুপ্ত শহর আওয়ামী লীগের কমিটিতেও সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে ছিলেন আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহা। সেই কমিটির সহসভাপতি ছিলেন শিখন। সেই কমিটির মেয়াদ ছিল ৭ বছর।

কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নাটকীয়ভাবে তার অবস্থান পাল্টে যায়। আওয়ামী লীগের সক্রিয় মুখ থেকে তিনি বিএনপির নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন। এর পর থেকেই স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে শিখনকে ঘিরে শুরু হয় আলোচনা। আর এই নিয়ে শিপনকে সমর্থনকারী হিসেবে সাখাওয়াত-টিপুর নাম উঠে আসে।

শুধু বিএনপির নেতাদের সান্নিধ্যই নয়, প্রশাসনিক অঙ্গনেও দেখা যায় শিখনের উপস্থিতি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সভায় তাকে নিয়মিত দেখা যায়। কখনো বক্তব্য রাখতে, কখনো আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গেছে তাকে। এভাবেই তিনি নিজের অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু এই সক্রিয় উপস্থিতি সনাতনী সমাজেও অস্বস্তি তৈরি করেছে। গত ১৯ মার্চ মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় শিখনকে ঘিরে সনাতনীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, যা পরে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। একইভাবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজা উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় শিখন বক্তব্য দিতে গেলে সনাতনীদেরই একাংশের তোপের মুখে পড়েন।

বিএনপির ভেতরেও ক্ষোভ রয়েছে শিপনকে নিয়ে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ- শিখন আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হয়েও এখন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সমর্থনে সনাতনীদের সব অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকছেন। এ ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। এর ফলে প্রকৃত বিএনপি কর্মীরা উপেক্ষিত হচ্ছেন আর বিতর্কিত মুখগুলো গুরুত্ব পাচ্ছেন। এতে দলের ভেতরে ক্ষোভের বিস্তার ঘটছে।

বিএনপির একাধিক নেতার ভাষ্য, শিখন সরকার শিপন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তখন তিনি ওসমান পরিবারের ভরসাযোগ্য সহযোগী ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। কিন্তু আজ তিনি বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছেন। দলের নিবেদিত কর্মীদের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত অস্বস্তিকর। বিএনপির নেতাদের ভেতরে এ ধরনের বিতর্ক দীর্ঘমেয়াদে দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়