মাঠ ছাড়েননি বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিতরা
থামানো গেল না নারায়ণগঞ্জের বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহীদের। জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনেই দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। কেউ কেউ ইতোমধ্যে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’র ঘোষণাও দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থী থাকাসত্ত্বেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়াকে দলের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ বলে অ্যাখ্যায়িত করছেন অনেকে।
ফলে ভোটের দিনে বিএনপির ধানের শীষের বিপরীতে দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থীর দেখা মেলার সম্ভবনা আরও পরিষ্কার করেছে। এ বিদ্রোহ আসনগুলোতে বিএনপির ভীত কিছুটা হলেও নড়বড়ে করে তুলছে বলেও পর্যবেক্ষকরা জানাচ্ছেন।
গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেলাজুড়ে বিএনপি ও সহাযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রভাব দেড় বছরে প্রত্যক্ষ করেছেন স্থানীয়রা। কোথাও কোথাও ক্ষমতার প্রদর্শনে নিজেদের মধ্যেই সংঘাত-সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন। দলের মধ্যেই বিভক্তি দিনে দিনে আরও প্রকট হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা গেছে একই আসনে বিএনপির একাধিক নেতার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার মধ্য দিয়ে। এই বিদ্রোহ বজায় থাকলে আসনগুলোতে জয় পেতে বিএনপির হিসেব-নিকেশ নতুন করে কষতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর)
শহর ও বন্দর নিয়ে গঠিত এ আসনটি জেলার সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ আসন। রাজধানীর পাশের এ আসনটিতে তাই প্রার্থী সংখ্যাও বেশি। সবগুলো দলই তাদের শক্তিশালী প্রার্থীকে আসনটিতে মনোনীত করেছে। বিএনপিও আসনটিতে একজনের নাম ঘোষণা করলেও শেষ মুহুর্তে প্রার্থী পরিবর্তন করে তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালামকে মনোনীত করেছে। তবে তার বাইরেও বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাদের মধ্যে আবার একজন দাবি করছেন, তিনি দলটির মনোনীত প্রার্থী। তারা হলেন, মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল।
বছরের শুরু থেকেই বিএনপির এ নেতারা রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন। প্রত্যেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করলেও গত ৩ নভেম্বর রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাদেশে ২৩৭টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন। ওই তালিকায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু গত সপ্তাহে সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবুল কালাম দু’জনই দাবি করেন। তবে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে কালামের নাম ঘোষণা করে দলটি।
নারায়ণগঞ্জ-৪
বিএনপি আসনটি তাদের রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামে শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ছেড়ে দিয়েছে। এ আসনে জমিয়তের প্রার্থী দলটির যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসাইন কাসেমী। এবার আইনে কিছু পরিবর্তন করায় জোটের প্রার্থীরাও নিজ দলের প্রতীকে লড়বেন, ফলে মনির হোসাইন কাসেমী আসনটিতে খেঁজুর গাছ প্রতীকেই লড়বেন।
কিন্তু বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কাসেমীকে আসনটিতে মেনে নেননি। আসনটির সাবেক সংসদ এবং বিগত নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। কেউ কেউ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র হওয়ার কথা প্রকাশ্যেই বলছেন।
আসনটিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শাহ আলম। অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির নামে মনানয়নপত্র জমা দিয়েছে বিএনপি সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী।
তারা প্রত্যেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। না পেয়ে আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। শাহ আলম ইতোমধ্যে ‘দলীয় নেতা-কর্মীদের আগ্রহে’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার ঘোষণাও দিয়েছেন। একাধিক সূত্র বলছে, গিয়াসউদ্দিনও সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
কিছুদিন আগেও আসনটি ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা নিয়ে থাকলেও নতুন সীমানা নির্ধারণে সিদ্ধিরগঞ্জ অংশ বাদ পড়েছে। তবুও, শিল্পাঞ্চলখ্যাত ফতুল্লা অঞ্চল নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি বিশেষ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ আসনে চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান। গণঅভ্যুত্থানের পর এ আওয়ামী লীগ নেতা সপরিবারে পলাতক।
নারায়ণগঞ্জ-৩
ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সোনারগাঁ ও শিল্পাঞ্চল সিদ্ধিরগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের অন্তর্ভূক্ত। আসনটিতে বিএনপি ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের নাম ঘোষণা করলেও তিনি ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আরও দুই বিএনপি নেতা।
তারা হলেন: সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য রেজাউল করিম এবং সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
আসনটিতেও ধানের শীষের বিরুদ্ধে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী অপেক্ষা করছে। এতে নিজ দলের প্রার্থী জয়ের পথ সংকীর্ণ করবে যার সুবিধা নেবে বিরোধী দলের প্রার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ-২
এ আসনে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের নাম ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে দল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আসনটিতে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু আড়াইহাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে এবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুর।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, আঙ্গুর প্রথম থেকেই নিজের বলয়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আজাদের পক্ষে প্রচারণা থেকে বিরত রয়েছেন। বরং নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। একই উদ্দেশ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-১
রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।
নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য আসনের মতো এ আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলটির অঙ্গ সংগঠনের এক নেতা। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দুলাল হোসেন স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে প্রস্তুতি নিয়েছেন।





































