২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:১২, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

কথা রাখলেন না বাবুল–কালাম!

কথা রাখলেন না বাবুল–কালাম!

নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর–বন্দর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাসুদুজ্জামানের নাম ঘোষণার পর থেকেই একজোট হয়ে বিরোধিতা করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও শিল্পপতি আবু জাফর বাবুল। মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে একাধিক সভা ও সংবাদ সম্মেলনে তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন—তাদের মধ্যে যাকে দল মনোনয়ন দেবে, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করবেন। কিন্তু বাস্তবে সেই ঘোষণা আর বাস্তবায়ন হয়নি।

সম্প্রতি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান নিজেকে এ আসনের মনোনীত প্রার্থী দাবি করে নির্বাচনী মাঠে নামেন। তার পক্ষে বিএনপির একটি অংশের নেতাকর্মী সক্রিয় হলেও পাশে দেখা যাচ্ছে না অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও আবু জাফর বাবুলকে।

গত ৩ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ঘোষণা করেন। এর পরপরই মনোনয়ন বঞ্চিত চার নেতা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে একযোগে আন্দোলনে নামেন। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ তারা এক মঞ্চে বসে সংবাদ সম্মেলন করেন। সে সময় তারা ঘোষণা দেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কাউকে দল মনোনয়ন দিলে সবাই মিলে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবো।’ পরবর্তীতে সদর–বন্দরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও সাখাওয়াত, কালাম ও বাবুলকে একই বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

এরই মধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের পক্ষে কাজ শুরু করেন আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তবে সাখাওয়াত, কালাম ও বাবুল নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন। ফলে টিপুকে বাদ দিয়েই তাদের আলাদা কর্মসূচি চলতে থাকে।

এদিকে গত ২০ ডিসেম্বর কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই সাখাওয়াত হোসেন খান দাবি করেন, তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৯ ডিসেম্বর দলীয় কার্যালয়ে ডেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

এরপর থেকেই সাখাওয়াত নিজেকে প্রার্থী দাবি করে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, নিয়মিত সভা-পথসভা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার পক্ষে বিএনপির একটি অংশ মাঠে নামলেও এ কার্যক্রমে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও আবু জাফর বাবুলকে দেখা যায়নি।

যদিও মনোনয়ন পাওয়ার দাবির পরদিনই সাখাওয়াত আবুল কালামের বাসা ও আবু জাফর বাবুলের কার্যালয়ে যান। বাবুল কার্যালয়ে না থাকলেও কালামের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। সে সময় কালাম তাকে মিষ্টিমুখ করান এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা সবাই এক পরিবারের লোক। বাইরে রাজনীতি, আর বাসায় সামাজিকতা।’ তবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাখাওয়াতকে সমর্থন করবেন কি না—এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।

অন্যদিকে এক সাক্ষাৎকারে আবু জাফর বাবুল বলেন, “মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক দলীয় নির্দেশনা আসেনি। মনোনয়ন পরিবর্তন হলে অবশ্যই তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে, যেমন মাসুদুজ্জামানের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। সাখাওয়াত হোসেন কীভাবে এই দাবি করছেন, সেটা আমার জানা নেই।”

তিনি আরও জানান, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তিনি দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন না।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে ঘোষিত ঐক্যের বাস্তব চিত্র এখন প্রশ্নের মুখে। প্রকাশ্যে ঐক্যের কথা বললেও মাঠের রাজনীতিতে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। দেখার বিষয় আনুষ্ঠানিক ভাবে যদি সাখাওয়াতের মনোনয়ন ঘোষণা দেয়া হয় তাহলে তারা কি করেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়