শিখনকে পাশে নিয়ে বিতর্কে সাখাওয়াত-টিপু

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ফের উত্তাপ ছড়িয়েছে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনকে ঘিরে। একসময় আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী হিসেবে পরিচিত শিখন এখন বিএনপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এর ফলে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে নতুন ধরনের টানাপোড়েন। বিশেষ করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ- সাখাওয়াত ও টিপুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ পরিচিতি বহনকারী শিখন আজও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী অবস্থানে আছেন।
আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপির দিকে ঝুঁকেপড়া শিখন সরকার শিপন ছিলেন ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানদের হয়ে পূজা মণ্ডপে গিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে ভোট প্রার্থনা, আওয়ামী লীগের মিছিলে অংশগ্রহণ কিংবা নানা কার্যক্রমে সক্রিয় থাকা ছিল তার নিয়মিত কাজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো এসব কার্যক্রমের ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মুখ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আনোয়ার হোসেন সভাপতি ও অ্যাডভোকেট খোকন সাহা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করলে, শিখন সেই কমিটিতে জায়গা পান। ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাকে কার্যকরী সদস্য পদে রাখা হয়। এর আগে বিলুপ্ত শহর আওয়ামী লীগের কমিটিতেও সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে ছিলেন আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহা। সেই কমিটির সহসভাপতি ছিলেন শিখন। সেই কমিটির মেয়াদ ছিল ৭ বছর।
কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নাটকীয়ভাবে তার অবস্থান পাল্টে যায়। আওয়ামী লীগের সক্রিয় মুখ থেকে তিনি বিএনপির নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন। এর পর থেকেই স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে শিখনকে ঘিরে শুরু হয় আলোচনা। আর এই নিয়ে শিপনকে সমর্থনকারী হিসেবে নাম উঠে সাখাওয়াত-টিপুর বিরুদ্ধে।
শুধু বিএনপির নেতাদের সান্নিধ্যই নয়, প্রশাসনিক অঙ্গনেও দেখা যায় শিখনের উপস্থিতিও। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সভায় তাকে নিয়মিত দেখা যায়। কখনো বক্তব্য রাখতে, কখনো আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গেছে তাকে। এভাবেই তিনি নিজের অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু এই সক্রিয় উপস্থিতি সনাতনী সমাজেও অস্বস্তি তৈরি করেছে। গত ১৯ মার্চ মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় শিখনকে ঘিরে সনাতনীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, যা পরে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। একইভাবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজা উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় শিখন বক্তব্য দিতে গেলে সনাতনীদেরই একাংশের তোপের মুখে পড়েন।
বিএনপির ভেতরে ক্ষোভ রয়েছে শিপনকে নিয়ে, নেতাকর্মীদের অভিযোগ—শিখন আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হয়েও এখন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সমর্থনে সনাতনীদের সব অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকছেন। এ ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। এর ফলে প্রকৃত বিএনপি কর্মীরা উপেক্ষিত হচ্ছেন আর বিতর্কিত মুখগুলো গুরুত্ব পাচ্ছেন। এতে দলের ভেতরে ক্ষোভের বিস্তার ঘটছে।
বিএনপির একাধিক নেতার ভাষ্য, শিখন সরকার শিপন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তখন তিনি ওসমান পরিবারের ভরসাযোগ্য সহযোগী ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। কিন্তু আজ তিনি বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছেন। দলের নিবেদিত কর্মীদের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত অস্বস্তিকর। বিএনপির নেতাদের ভেতরে এ ধরনের বিতর্ক দীর্ঘমেয়াদে দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে শিখনের মতো বিতর্কিত ব্যক্তিকে কাছে টেনে নেওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা । এতে একদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভেতরে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা।