নীলকণ্ঠ মাসুদুজ্জামান

নারায়ণগঞ্জে একজন সফল ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও ক্রীড়া অনুরাগী হিসেবে মাসুদুজ্জামান মাসুদের পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা আগে থেকেই ছিল। বিএনপিপন্থী এ ব্যবসায়ী দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীর কাছেও আস্থার একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি। কিন্তু বিপত্তি তৈরি হয় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে। সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও তৃণমূলে আস্থার জায়গাটি এখনও বজায় থাকলেও দলের কয়েকজন নেতা প্রতিনিয়ত মাসুদুজ্জামানের সমালোচনা করে বেড়াচ্ছেন। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে দলের অভ্যন্তরীণ সমালোচনা ও বিরোধিতার মুখেও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে না গিয়ে ‘সহনশীল’ অবস্থান নিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল এটিকে তার ‘দূরদর্শিতা’ হিসেবে দেখছে। দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে গতবছরের আগস্টের পর থেকে মাসুদুজ্জামানকে ঘিরে তীব্র সমালোচনা ও নানা প্রচারণা চালানো হলেও তিনি সবকিছু নীরবে মোকাবিলা করছেন। যেন সকল বিষ হজম করা নীলকণ্ঠ তিনি। তার এই ধরনের সহনশীল মনোভাব রাজনৈতিক মহলে তাকে আরও এগিয়ে দিয়েছে।
দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মডেল ডি ক্যাপিটালের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদ ব্যবসায়ী মহলে তার অবস্থান গত কয়েক দশক ধরে রেখেছেন। বিএনপি ঘরানার পরিবারে বেড়ে ওঠা মাসুদুজ্জামান তরুণ বয়সে যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি নগরীর একটি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে ব্যবসায় মনোনিবেশ করলেও সমাজের মানুষের এবং দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি তার দায়বদ্ধতার কথা ভুলে যাননি।
পোশাক খাতে সফল ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান শিক্ষাখাত থেকে শুরু করে ক্রীড়াঙ্গণেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে ছিলেন সবসময়। করোনাকালে তার বিশেষ সহযোগিতার কথাও মনে রেখেছে শহরবাসী। এছাড়া, মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অর্থ সহযোগিতা করেছেন তিনি। সদর উপজেলার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছিলেন মাসুদ। শারদীয় দুর্গোৎসবেও সদর ও বন্দরের সবগুলো পূজামণ্ডপ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পেয়েছেন মাসুদুজ্জামানের সহযোগিতা।
কেবল সমাজসেবায় নয় রাজনৈতিক অঙ্গণে ভূমিকা রেখেছেন সমান তালে। গত দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকের ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। গত দেড় দশকে হাজারো নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল। এসব মামলা পরিচালনায়ও সহযোগিতা করেছেন তিনি। ব্যবসায়ি অঙ্গণে বিএনপি ঘরানার ব্যবসায়ীদের সামনে ঢাল হয়ে ছিলেন।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ান মাসুদুজ্জামান। ওই সময় ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে না পড়তে নিরব ভূমিকা পালন করলেও ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন, করেছেন সব ধরনের সহযোগিতাও। এজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর নজরদারিতেও ছিলেন মাসুদ। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতন না হলে জেলে যেতে হতো তাকে।
বিগত সময়ে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রতিদানও পেয়েছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। নারায়ণগঞ্জবাসী যেমন তার অবদানের কথা বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে তুলে ধরেছেন তেমনি দলের নেতা-কর্মীরাও তা ভুলে যাননি। কিন্তু তাকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে বিএনপির কয়েকজন নেতাকে। এবং এই সমালোচনা বেড়েছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে তার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা প্রকাশ্যে বলার পর থেকে। যারা সমালোচনায় এগিয়ে আছেন তারা সবাইই আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন।
তবে, মাসুদুজ্জামানের সমর্থকরা বলছেন, এসব সমালোচনার পাল্টা প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দলীয় সদস্য পদ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি বিভেদকে অন্যপাশে রেখে জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষস্থানীয় সকল নেতার উপস্থিতি নিশ্চিত করে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। এরপরও বাক্যবাণে তাকে প্রায় প্রতিনিয়তই জর্জরিত করার চেষ্টা থাকলেও তিনি এ বিষয়ে বিরূপ কোনো মন্তব্য করছেন না, বরং তিনি ডাক দিয়েছেন ঐক্যের। মনোনয়ন ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক আক্রমণেও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে কোন পাল্টা আক্রমণ না করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেছেন, “আমরা নোংরামি ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে চাই না। কিন্তু কেউ কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে। আপনারা মাঠে তদন্ত করে ওই সমস্ত লোকদের শাস্তির আওতায় আনেন। আমিও যদি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করি আমিও শাস্তির আওতায় আসবো। সমস্ত জাতীয়তাবাদী দলের নেতাবৃন্দের কাছে অনুরোধ করবো কোনভাবেই আপনারা বাকবিতণ্ডায় জড়াবেন না। সময় ও আপনার কর্ম দিয়ে জবাব দিবেন।”
মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, “আমরা নতুন ধারার রাজনীতি করতে চাই। আমরা কোনো ধরণের দলীয় পদ ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে চাই না। আমরা দেখেছি, জুলাই-আগাস্টে নারায়ণগঞ্জবাসী ত্যাগের যে মূল্য দিয়েছে, তা ভোলার নয়। অনেক প্রপাগান্ডা চালানোর চেষ্টা হবে, কিন্তু তাতে কান দেবেন না। আমি মনোনয়ন পাই বা না পাই, সবসময় আপনাদের পাশে থাকবো।
মাসুদুজ্জামান বলেন, “আমরা নতুন নারায়ণগঞ্জের স্বপ্ন দেখি। বন্দর ও শহরের উন্নয়নে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষা, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি— এসব সমস্যা সমাধানে আমরা বাস্তবমুখী কাজ করতে চাই। যদি সুযোগ পাই, মানবকল্যাণে একযোগে কাজ করবো।”
তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরে সহাবস্থানের রাজনীতি চর্চার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।”
মাসুদুজ্জামান মাসুদের এই সহনশীল ও দায়িত্বশীল মনোভাব শুধু তাকে রাজনৈতিক মহলে স্বীকৃতি দেয়নি, বরং সাধারণ মানুষ ও দলের নেতা-কর্মীর কাছেও আস্থা বৃদ্ধি করেছে। মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার মাঝেও তিনি প্রমাণ করেছেন, কার্যকর নেতৃত্বের অর্থ শুধু উচ্চস্বর বা ক্ষমতার প্রয়োগ নয়, বরং দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি, সংযম ও ঐক্যের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করাই। নারায়ণগঞ্জবাসী এবং দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় ও সহাবস্থানের মাধ্যমে মাসুদুজ্জামান দেখিয়েছেন, নতুন ধারার রাজনীতি শুধুই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং সবার কল্যাণের প্রতিশ্রুতির নাম। কাঁদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতিতে না জড়িয়ে ‘ইমেজ ক্লিন’ রাখার মধ্যে দিয়ে নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে মাসুদুজ্জামান শক্তিশালী করছেন বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।