৩০ জুন ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:১৭, ২৯ জুন ২০২৫

মুকুলের উপর হামলার আগে ‘১৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন বজলু’

মুকুলের উপর হামলার আগে ‘১৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন বজলু’

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় সাবেক বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুলের উপর হামলা ও পরনের জামাকাপড় ছিঁড়ে লাঞ্ছিত করার কয়েকদিন আগে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি বজলুর রহমান। চাঁদা না দিলে ঠিকাদারি কাজ করতে না দেবারও হুমকি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়। ওই অভিযোগে বজলুর রহমান ও তার কয়েকজন অনুসারীদের অভিযুক্তও করা হয়।

এদিকে, রোববার হামলার শিকার হওয়ার পর আতাউর রহমান মুকুলও অভিযোগ করেন, চাঁদা না পেয়ে তার উপর হামলা করেছে বজলুর রহমান ও তার লোকজন।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বন্দরের হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ঠিকাদারি কাজ পায় এমএস দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল।

রোববার তিনি এ ঠিকাদারি কাজের বিষয়ে কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সামনে যান মুকুল। সেখানে তার গাড়ি থামার পরপরই একদল ব্যক্তি হামলা চালান। পরে গাড়ি থেকে তাকে টেনে-হিচড়ে বের করে মাটিতে ফেলে ব্যাপক মারধর করা হয়। পরনের পাঞ্জাবি ও পায়জামাও ছিঁড়ে ফেলে তাকে প্রায় বিবস্ত্র করে ফেলা হয়। তাকে মারধরের সময় ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে গালাগালিও করা হয়।

পুরো ঘটনাটি যখন ঘটে তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্যও। পরে পুলিশই ৬৮ বছর বয়সী সাবেক এ বিএনপি নেতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বজলুর রহমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছিল হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ‘ওভারহোলিং’ এর কাজ পাওয়া এমএস দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে আব্দুস সোবহান নামে এক ব্যক্তি এ অভিযোগ দেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চাঁদা না দিলে কোনো কাজ করতে পারবে না বলেও গত ২৩ জুন বিএনপি নেতা বজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা হুমকি দেয়।
অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যরা হলেনÑ মো. রাসেল (৪৪), মো. কামাল ওরফে কেরা কামাল (৪৪), মোহাম্মদ গোলজার হোসেন (৪৮), মো. নাদিম (৩৮), মো. আকাশ (২৫), মো. সেলিম (৪৫) ও মো. শামীম। তারা সকলেই বিএনপি নেতা বজলুর রহমানের অনুসারী বলেও অভিযোগ করেন আব্দুস সোবহান।

এই চাঁদা দাবির ঘটনার পর হামলা হতে পারে শঙ্কা থেকে পুলিশকে অবগত করেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বলে জানান আতাউর রহমান মুকুল। ঘটনার সময় সেখানে চারজন পুলিশ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।

মুকুল বলেন, “পুলিশও কাউকে থামাতে পারেনি।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ ও নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে ঘটনাস্থলে স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ পৌঁছানোর দু-এক মিনিটের মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে যায়। তাৎক্ষনিক পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নেন।”

এ ঘটনায় অভিযুক্ত বজলুর রহমান পাশের সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অদূরে তার বাড়ি। তার মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে একটি গণমাধ্যমে তিনি দাবি করেন, ঠিকাদারি কাজটি যে প্রতিষ্ঠান পেয়েছে তার মালিক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। ওই আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ নিয়ে ঠিকাদারি কাজ করতে আসায় ‘ক্ষুব্দ স্থানীয় জনতা’ মুকুলকে মারধর করেছেন।

এই ঘটনার সঙ্গে তার বা তার ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তির জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়