৩০ জুন ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ২৯ জুন ২০২৫

আপডেট: ২০:৪৭, ২৯ জুন ২০২৫

বন্দরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুকুলের উপর হামলা

বন্দরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুকুলের উপর হামলা

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ‘চাঁদা না পেয়ে’ সাবেক এক বিএনপি নেতাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মারধর ও পরনের জামাকাপড় ছিড়ে লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেছে।

রোববার (২৯ জুন) দুপুরে উপজেলার হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে এই ঘটনা ঘটে বলে জানান বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী।

নির্যাতনের শিকার আতাউর রহমান মুকুল (৬৮) বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যন। তার অভিযোগ, চাঁদা না পেয়ে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নির্দেশে তার অনুসারীরা এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

বন্দর উপজেলার দুইবারের চেয়ারম্যান মুকুল নিজেও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যদিও মহানগর বিএনপির সাবেক এ সহসভাপতি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হন।

বন্দর থানার ওসি লিয়াকত বলেন, কয়েকদিন আগে হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে একটি কাজের দরপত্র উন্মুক্ত হয়। কাজটি পায় এমএস দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দুপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে যান আতাউর রহমান মুকুল। তখন তাকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি মারধর ও হেনস্থা করেন।

“যারা হামলা করেছে তারা স্থানীয় বিএনপি নেতা বজলুর রহমানের অনুসারী। ঠিকাদারি কাজটি পেতে তারাও দরপত্র দিয়েছিলেন”, যোগ করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর বিকেলে মুকুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নিজে ঠিকাদারি কাজ করি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের এই কাজটি আমি করার দায়িত্ব পেয়েছি। আমি এইটার জন্য সরকারি কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি সেখানে যাবার পরপরই আমার উপর হামলা হয়। আমাকে গাড়ি থেকে টেনে-হিচড়ে নামিয়ে মারধর করে জামা-কাপড় সব ছিড়ে ফেলে।”

“বজলুর রহমানের সঙ্গে আমার কখনই খারাপ সম্পর্ক ছিল না। আমরা একসাথে জেলও খাটছি। কিন্তু ও আমার উপর এইভাবে হামলা করাবে এই ধারণাও করতে পারি নাই।”

মুকুলকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে টেনে নামিয়ে মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে তাকে। মারধরের সময় মুকুল ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে গালাগালি করতে শোনা যায় এবং তার পরনের পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিড়ে ফেলা হয়।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বজলুর রহমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছিল হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ‘ওভারহোলিং’ এর কাজ পাওয়া এমএস দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে আব্দুস সোবহান নামে এক ব্যক্তি এ অভিযোগ দেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চাঁদা না দিলে কোনো কাজ করতে পারবে না বলেও গত ২৩ জুন বিএনপি নেতা বজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা হুমকি দেয়।
হামলা হতে পারে শঙ্কা থেকে পুলিশকে অবগত করেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বলে জানান আতাউর রহমান মুকুল। ঘটনার সময় সেখানে চারজন পুলিশ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।

মুকুল বলেন, “পুলিশও কাউকে থামাতে পারেনি।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ ও নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে ঘটনাস্থলে স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ পৌঁছানোর দু-এক মিনিটের মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে যায়। তাৎক্ষনিক পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নেন।”

এ ঘটনায় অভিযুক্ত বজলুর রহমান পাশের সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অদূরে তার বাড়ি। তার মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে একটি গণমাধ্যমে তিনি দাবি করেন, ঠিকাদারি কাজটি যে প্রতিষ্ঠান পেয়েছে তার মালিক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। ওই আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ নিয়ে ঠিকাদারি কাজ করতে আসায় ‘ক্ষুব্দ স্থানীয় জনতা’ মুকুলকে মারধর করেছেন।

এই ঘটনার সঙ্গে তার বা তার ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তির জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

তবে, এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের ওসি লিয়াকত আলী।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়