বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে উত্তাল নারায়ণগঞ্জ

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: কুষ্টিয়ায় রাতের আঁধারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুষ্কৃতিকারীরা। এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে রোববার (৬ ডিসেম্বর) পৃথক বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতারা। বিক্ষোভে নেতাকর্মীরা ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতা করা হেফাজত নেতাদের ব্যাপক সমালোচনা করেন।
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে শতাধিক নেতাকর্মী। বিক্ষোভে অংশ নেন মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি চন্দন শীল, সহসভাপতি রবিউল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, যুগ্ম সম্পাদক আহসান হাবীব, জিএম আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মাহমুদা মালা, নাসিক কাউন্সিলর কবির হোসাইন, মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য আবেদ হোসেন, মনিরুজ্জামান মনির, বন্দর থানা যুবলীগের সভাপতি হাবিব আল মুজাহিদ পলু প্রমুখ। শহরের দুই নম্বর রেলগেইটে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বঙ্গবন্ধু সড়ক হয়ে চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এসে শেষ হয়।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে মন্তব্য করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার পায়তারা করছে। স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামাত জোট জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ আতঙ্কিত। ঠিক সেই মুহুর্তে উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশকে অশান্তির রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে।’
সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বলেন, ‘আমরা জানি কারা ভাস্কর্য ভাঙছেন, ভাঙার চেষ্টা করছেন। এটা শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নয়, এটা বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্বের অংশ। আমরা জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দিতে পারি না, দেবো না।’ হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, কোনো সন্ত্রাসী, মৌলবাদীগোষ্ঠী ভাস্কর্য ভাঙে বা ভাঙার চেষ্টা করে তাহলে হাত কেটে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেয়া হবে।
দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে শহরে মিছিল বের করে মহানগর যুবলীগের নেতাকর্মীরা। সংগঠনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনুর নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতিএহসানুল হাসান নিপু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেনসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী মিছিলে অংশ নেন।
মিছিল শেষে সমাবেশে জাকিরুল আলম হেলাল বলেন, ‘বিএনপি যখন মানুষ পুড়িয়ে মারে, কৃষকদের মারে, বাস পোড়ায় তখন তো আপনারা মিছিল বের করেন না। কিন্তু ভাষ্কর্যের বেলায় মাঠে নেমে গেলেন, আন্দোলন শুরু করলেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। বাংলাদেশের ওলামাগণ কি ধৈর্য ধরতে পারলেন না? জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিবেন, সকল ধর্মের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিবেন, কোরআন-হাদিসের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিবেন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ধৈর্য ধরেন। কোনো অপশক্তি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির থেকে বলিয়ান হতে পারবে না।’
শাহাদাত হোসেন ভুঁইয়া সাজনু বলেন, ‘যখন স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেয় তখন লজ্জা লাগে, দুঃখ লাগে। গত পরশুদিন রাতের আধারে যেখানে মুজীবনগর সরকার গঠিত হয়েছে সেখানে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির উপর হামলা চালানো হয়। এটা ১৯৭৫ সাল নয়, ২০২০ সাল। এখন যদি তাদের দাবি মেনে নেয়া হয়, তাহলে কিছুদিন পর শহীদ মিনারে, স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে পারবো না। সেগুলোও ভেঙে ফেলতে হবে। তা কি আপনারা চান? যদি না চান, তাহলে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্ত করে ওদের দাত ভাঙ্গা জবাব দিবেন। বাংলাদেশকে মৌলবাদী শক্তি থেকে রক্ষা করতে আবারও গর্জে উঠতে হবে।’
ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা শ্রমিক লীগের নেতারা। শহরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দিন বাবুল, সহসভাপতি আলী হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা ব্যাংক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল কাদির প্রমুখ। শ্রমিক লীগ নেতারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতাকারীরা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে। শেষে পাকিস্তান, ভারত কিংবা পাশ্ববর্তী কোনো দেশে পালিয়েও পার পাবেন না।’
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম