১৫ জুলাই ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ১৪ জুলাই ২০২৫

ইসলামের লেবাসধারীরা বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে: রিজভী

ইসলামের লেবাসধারীরা বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে: রিজভী

ইসলামের নাম দিয়ে ‘লেবাসধারীরা’ তাদের ছাত্রদেরকে দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির ‘প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে নাম উল্লেখ না করে ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলের ব্যাপক সমালোচনা করেন বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব।

স্বাধীনতার পর ৭২ থেকে ৭৫ সালের শাসনামলে ‘হত্যা, গুম ও রক্ষীবাহিনীর ত্রাসের’ কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, “পঁচাত্তরের পরে যখন জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলেন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করলেন। তার আইনের শাসন, ন্যায়বিচারের কথা আজও মানুষের মুখে মুখে। ওই আমলে মানুষ দরজা খুলে ঘুমাতো। এরশাদের আমলে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার, মানুষের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতার জন্য আপোস করেনি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াও। অনেক প্রলোভন ও আপোসকামীতার সুযোগ ছিল। কিন্তু জনগণের কাছে দেওয়া ওয়াদা উনি ভঙ্গ করেননি।”

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগের চরিত্রতো সবাই জানে, আওয়ামী লীগ মানেই লুটপাটের দল। কিন্তু যারা ইসলামের নাম নিয়ে কথা বলেন, তারা শেখ হাসিনার সাথে ’৮৬ সালে নির্বাচনে গেছেন না? তারাও বলেছিলেন, ‘এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান’। হাসিনাও বলেছে, তারাও বলেছে। তাহলে এটা কোন ধরনের ইসলাম? আল্লাহর ইসলাম, প্রিয় নবীর ইসলাম তো অঙ্গিকার ভঙ্গ না করা, সত্যের পথে থাকা। অথচ ইসলামের নাম দিয়ে লেবাসধারীরা তাদের ছাত্রদেরকে দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।”

“অপপ্রচার করেও যখন কাজ হচ্ছে না, তাই কারও কারও তাবেদারি করার চেষ্টা করছে। কারও কারও তাবেদার শেখ হাসিনা ছিল, এখন সেই জায়গায় এজেন্সি নিয়েছে তারা”, যোগ করেন তিনি।

এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী ‘বিএনপিকে চায়’ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, “এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী ৯২ পার্সেন্ট। তারা বিএনপিকে চায়। কারণ, সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম কে যুক্ত করেছিলেন? আপনারা কি ভুলে গেছেন?”

তিনি বলেন, “বিএনপি ১৬ বছর জনগণের শুভেচ্ছা ও শক্তিতে একটা বিরাট দানব, রাক্ষস, একটা রক্তপিপাসুর বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকেছিল। যারা অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করতে জানেন না, তাদের সঙ্গে লোকজন থাকে, তারই প্রমাণ এই জনসমাবেশ। অথচ বিএনপির বিরুদ্ধে কত অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র ও কুৎসা রটানো হচ্ছে।”

রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিএনপির এত বড় পরিবার, এই পরিবারের মধ্যে কোনদিক দিয়ে দু-একটা দুষ্কৃতিকারী ঢুকতে পারে। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে, বিএনপির নাম বিক্রি করে দু-একজন দুষ্কৃতিকারী থাকতে পারে। কিন্তু তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। সারা বাংলাদেশে বিএনপির নামে যারা অপকর্ম করছে তাদের বহিষ্কারের পাশাপাশি মামলাও দেওয়া হয়েছে।”

“কিন্তু আজকে দু-একটি সংগঠন, ইসলামী লেবাসধারী একটা-দুইটা, সবাই না। আর নতুন কিছু মাসুম বাচ্চারা। এদেরকে দিয়ে নানাভাবে কথা বলাচ্ছে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, যদি বিএনপি কাউকে আশ্রয় বা প্রশ্রয় দেয় তাহলে আপনারা কথা বলতে পারতেন কিন্তু এটা তো দিচ্ছে না”, বলেন রিজভী।

‘মব জাস্টিস’ সমাজে ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এ নেতা বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার আমল গেছে, নানা আমল গেছে, কই আমরা তো কখনও মব জাস্টিসের কথা তো শুনিনি। এখন মব জাস্টিস সমাজে ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। কারা করছে এটা সবাই জানে।”

তিনি এ সময় ছাত্রদল নেতা সাম্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে তোফাজ্জ্বলকে হত্যার কথাও সামনে আনেন। 

তিনি বলেন, “ছাত্রদলের নেতা সাম্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাকে কুপিয়ে কুপিয়ে লাঠির বাড়ি দিয়ে হত্যা করেছে। এইটা দেখেনি মানুষ? একজন মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জল। (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের) ফজলুল হক হলে মোবাইল চুরি করেছে বলে তাকে এমনভাবে পিটুনি দেওয়া হলো যে, সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।

এগুলো ‘কারা করেছে’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

রিজভী বলেন, “আজকে বড় বড় কথা বলছেন অনেকে আর কুৎসা রটাচ্ছেন বিএনপির বিরুদ্ধে। বিএনপি যদি পদক্ষেপ না নিতো, সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিতো, মামলা দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা না করতো, তাহলে ভিন্ন কথা ছিল। বিএনপি সেই দল যারা এদেশে শান্তির সুবাতাস বইয়েছে।”
রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এ আয়োজনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেওয়া হয়।

পরে রুহুল কবীর রিজভী বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দিন।

উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক ওরফে খোকন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়