নির্বাচনে প্রশাসন হবে রেফারির ভূমিকায়, সবাইকে সমান সুযোগ: ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির বলেছেন, ম্যান্ডেট পেলেই কেউ রাজা হয়ে যায়—এমন মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি—আমরা সবাই জনগণের চাকর। এই জায়গা থেকে সরে গেলে দেশ আবার ফ্যাসিবাদের দিকেই ফিরে যাবে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্রশাসনের ভূমিকা রেফারির মতো। রেফারির যেমন আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই, আমাদেরও নেই। আমাদের কাছে প্রত্যেক প্রার্থী সমান। কাউকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হবে না, আবার কেউ যেন সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়—দুটোই আমরা নিশ্চিত করতে চাই।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন যেন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ব্যতিক্রম হয়—এই লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন। আগামী ১০০ বছর সামনে রেখে একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা চলছে। প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লাগলেও আমরা চেষ্টা করছি, যাতে সবাই নির্ভয়ে জনগণের সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারেন।
নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পোস্টার অপসারণসহ আচরণবিধি বাস্তবায়নে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আচরণবিধির বাইরে গেলে হস্তক্ষেপ করা হবে, সেটা কারও ভালো না লাগলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজন। ব্যানার, শোডাউন ও বেআইনি প্রচারণা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।
গণভোট প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটের বিষয়টি যেন গৌণ না হয়ে যায়। প্রার্থীরা যখন নিজেদের মার্কার পক্ষে ভোট চাইবেন, একই সঙ্গে গণভোটের বিষয়গুলোও জনগণের সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর।
তিনি আরও বলেন, আচরণবিধি খুব বড় কোনো ডকুমেন্ট নয়। প্রার্থী, তার নির্বাচনী এজেন্ট ও প্রধান সমর্থকদের অবশ্যই এটি ভালোভাবে পড়া উচিত। আচরণবিধি মেনে চললে আইনের কঠোর প্রয়োগের প্রয়োজনই হবে না।
জুলাই আন্দোলন ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রসঙ্গ টেনে মো. রায়হান কবির বলেন, এই দুইয়ের স্পিরিট একই—গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন। গণতন্ত্র ও সুশাসন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হয় না। তাই এমন একটি সমাজ গড়তে হবে, যেখানে ভিন্নমত সহ্য করা হবে, নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, সামনের নির্বাচন প্রশাসনের জন্য একটি ‘এসিড টেস্ট’। এই নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে। অন্যথায় জাতি আবার পিছিয়ে পড়বে। তাই সবার সহযোগিতায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ. জা. মু. আহসান শহীদ সরকার, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মইনুদ্দিন আহমাদ, আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার, গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন, ইসলামী আন্দোলন জেলা সভাপতি দ্বীন ইসলাম, মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, খেলাফত মজলিসের নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী ইলিয়াস আহমদ, গণ অধিকার পরিষদ জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ, মহানগর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আরিফ ভূঁইয়া, জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিরব রায়হানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা।





































