দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুরু হলো কদম রসুল সেতুর নির্মাণ কাজ

শুরু হয়েছে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কদম রসুল সেতুর নির্মাণ কাজ। নানা ধরণের জটিলতা নিরসন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে শুরু হয়েছে সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম।
গত ১৩ জুলাই থেকে নারায়ণগঞ্জ সদরের এই প্রান্ত থেকে সেতুর মোবিলাইজেশনের কাজ অর্থাৎ নির্মাণ প্রকল্পের শুরুতে স্থান প্রস্তুত, জায়গা পরিষ্কার করা সহ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুজ্জামান।
সরজমিনে দেখা যায়, শীতলক্ষ্যা পাড়ের খালের পাশে কুমুদিনী সংলগ্ন অংশে এবং আশপাশের জায়গা পরিষ্কার করা হচ্ছে এবং কাজের জন্য স্থান প্রশস্ত করা এবং প্রকল্প স্থলে কিছু স্থাপনা সরিয়ে দিয়ে কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে সেতুর নির্মাণের কার্যক্রম।
সেতুটির মাধ্যমে শহরের ৫ নম্বর ঘাট এলাকার সঙ্গে অপর প্রান্তে বন্দর উপজেলার একরামপুর এলাকার সংযোগ করার মাধ্যমে বন্দর ও সদরের দুই প্রান্তের মানুষের মাঝে যোগাযোগের পথ সৃষ্টি হবে।
এর আগে, ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পূর্বে দুই প্রান্তের মানুষদের দুর্ভোগ দূর করতে শহরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। মেয়র নির্বাচিত হয়ে ২০১৭ সালে শীতলক্ষ্যার উপরে ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ ১ হাজার ৩৮৫ মিটার সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে নাসিক। বন্দরের ঐতিহ্যবাহী কদমরসুল দরগাহের নামে এ সেতুর নামকরণ করারও সিদ্ধান্ত হয়।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর একনেক সভায় এ প্রকল্পের জন্য ৫৯০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বরাদ্দ পায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু জটিলতা দেখা দেয় জমি অধিগ্রহণের সময় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আপত্তি এতে আটকে যায় প্রকল্প কাজ। এরই মধ্যে জটিলতা নিরসন সহ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায় ২৮ শতাংশ। সবধরণের প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে শুরু হয়েছে সেতুর কাজ।
যদিও কদম রসুল সেতুর পশ্চিমাংশের মুখের নকশায় ত্রুটি চিহ্নিত করে তা পুনঃনির্ধারণের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছিলো নারায়ণগঞ্জের নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা এবং এ নিয়ে মানববন্ধনও হয়েছিলো বিভিন্ন মহল থেকে।
যেখানে বলা হয়, কদম রসুল সেতুর বর্তমান নকশায় পশ্চিমাংশের মুখটি শহরের অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়ক ফলপট্টি এলাকায় নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে এসে নেমেছে।এটি বাস্তবায়িত হলে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য ভয়াবহ দুর্ভোগের সৃষ্টি হবে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এক নং রেলগেট থেকে সিরাজউদ্দৌলা সড়কটিতে প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিক যানজট থাকে। এইখানে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল, নারায়ণগঞ্জ কলেজ, দিগুবাবু বাজারের প্রবেশমুখ এবং রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটের সংযোগ সড়ক হওয়ায় যানজট আরও প্রকট হবে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে।
নাগরিক আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, এত বড় সেতুর নকশা তৈরির ক্ষেত্রে নগরের এই বাস্তবতা ও সংকট গভীরভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। তারা এই প্রকল্পে যথাযথ সমীক্ষার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন। ঘণ্টায় কত যানবাহন চলাচল করবে এবং সংশ্লিষ্ট সড়কের ধারণক্ষমতা কতটুকু, তা নকশা তৈরির সময় সঠিকভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই এই ভুল হয়েছে বলে তারা আপত্তি করেন।
এবিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুজ্জামান বলেন, “নাগরিক মহল থেকে সেতুটির নকশা পরিবর্তনের দাবি করা হয়েছিলো। এ নকশার সম্পূর্ণ এখতিয়ার সিটি কর্পোরেশনের। আমরা কাজ বাস্তবায়ন করার দায়িত্বে আছি।”
তিনি বলেন, “এখনো সেতুর মূল কাজ এখনো শুরু হয়নি যা আরো কিছুদিন সময় লাগবে এর মধ্যে যদি সিটি কর্পোরেশন সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে নকশা পরিবর্তনের হয়তো সম্ভাবনা থাকতে পারে। এটা তাদের উপর নির্ভর করে।”