১৯ মে ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:০৮, ১৮ মে ২০২৫

সড়ক নয় যেন ট্রাক-স্ট্যান্ড!

সড়ক নয় যেন ট্রাক-স্ট্যান্ড!

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কটি উত্তরে চাষাঢ়া থেকে দক্ষিণে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। অত্যন্ত প্রশস্ত এই সড়কটির আধা কিলোমিটার দিন-রাত থাকে পণ্যবোঝাই কভার্ডভ্যান, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের দখলে। এতে প্রতিনিয়ত সড়কের এ অংশে যানজট লেগে থাকে।

পাশেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগরভবন, সরকারি হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকলেও বছরের পর বছরের ট্রাকের এই দাপট মোকাবেলায় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের মন্ডলপাড়া থেকে নিতাইগঞ্জ মোড় পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়কের দুই পাশেই রেখে দেওয়া হয়েছে ছোট-বড় আকারের কভার্ডভ্যান, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান। এ প্রতিবেদক গুনে এতটুকু পথজুড়ে ২৩৮টি যানবাহন থামিয়ে রাখা দেখতে পান। সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কয়েকটিতে আবার পণ্য লোড-আনলোডও চলছিল।

এ সড়কে চলাচল করা সাধারণ যাত্রী ও চালকরা বলেন, সড়কটি এমনিতে অনেক প্রশস্ত। কিন্তু চারলেনের প্রশস্ত এই সড়কের দুই-তৃতীয়াংশ থাকে ট্রাকের দখলে। সরু একটু প্যাসেজ থাকে যেখান দিয়ে নিয়মিত ছোট-বড় যানবাহনগুলো যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে নিত্য যানজট থাকছে এ সড়কে।

স্থানীয় বাসিন্দা রাকিবুল হাসান বলেন, “দুই নম্বর রেল গেট থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত যাতায়াতে সময় লাগার কথা ৫ মিনিটেরও কম। কিন্তু সেখানে ২০ মিনিটেও পৌঁছানো সম্ভব হয় না। কারণ, দুই পাশে ট্রাক রাখার কারণে রাস্তার বেশির ভাগ অংশ বন্ধ থাকে।”

রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ সিকদার সোহান ক্ষোভ প্রকাশ কওে বলেন, “এখানে এতগুলো ট্রাক রাখা হয় যে, আমাদের রাস্তায় হাঁটার জায়গাও নেই। ব্যস্ততম একটা সড়কের অধিকাংশ জায়গায় এইভাবে ট্রাকগুলো স্ট্যান্ড করে রেখেছে।”

ট্রাকগুলো সারিবদ্ধ সড়কের উপরে রেখে দেওয়ায় ফুটপাত দিয়ে চলাচলও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বলে জানান এ শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, “এইখানের ফুটপাত নিরাপদ না। ট্রাকের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের লোকজন থাকে। আর ট্রাক স্ট্যান্ড থাকার কারণে ছিনতাইও হয় অনেক। ফুটপাতে ছিনতাই হলেও ট্রাকের সারির কারণে রাস্তা থেকে কেউ তা দেখতেও পায় না।”

কথা হয় এক ট্রাক চালকের সাথে। মো. মনির নামে ওই চালক বলেন, “ সামনে যেহেতু নিতাইগঞ্জ, সেখানে বড় বড় মোকাম। বহু বছর ধওে তাই এখানে ট্রাক স্ট্যান্ড ছিল। জায়গা নাই, তাই রাস্তার উপরে রাইখা ট্রাকে মালামল লোড-আনলোড করতে হয়।” 

আরেক চালক মো. ফয়সাল বলেন, “সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাদের কোন জায়গা দেওয়া হয় নাই। ব্যবসায়ী এলাকা তো গাড়ি এইখানে না রাখলে, কই থেকে মালামাল লোড-আনলোড করবো?”

যদিও স্থানীয়রা জানান, কয়েকবছর আগে নিতাইগঞ্জ এলাকার যানজট নিরসনে ট্রাক স্ট্যান্ড ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কয়েকমাস পরই আবারও সড়কের উপর ট্রাকগুলো রেখে লোড-আনলোডের কাজ চলতে থাকে। যা এখনও স্থায়ী হয়ে আছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক সুজন মাহমুদের মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, “আমরা নতুন করে ট্রাক-স্ট্যান্ডের পরিকল্পনা করছি। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও আমরা মাইকিং করছি যেন, এখানে গাড়ি না রাখে। তারপরেও যদি কেউ ট্রাক রাস্তায় রাখে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়