জুলাই যোদ্ধা জিসানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি আন্দোলনকারীদের

জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান একজন জুলাই যোদ্ধা। প্রথম থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছেন এবং পরবর্তী সময়েও দেশের জন্য নানা উদ্যোগে কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অনলাইন পোর্টাল প্রেস নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধা ও হামলা দেওয়ার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া একাধিক ছাত্র নেতা। মামলায় জিসান ও তার পরিবারকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করে তারা জিসানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ফারহানা মানিক মুনা বলেন, "নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন শুরু হয় ১৪ জুলাই। ১৬, ১৭ তারিখে আমরা শহরে মিছিল করতাম, যেখানে নানা দিক থেকে ছাত্ররা যুক্ত হতো। শহরের চুনকা পাঠাগারের দিক থেকে যে অংশ যুক্ত হতো, তাতে জিসান ছিল। সে আন্দোলনে নানাভাবে ভূমিকা রেখেছে। আন্দোলন পরবর্তী সময়েও সে আমাদের সাথে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। এছাড়া সে তার এলাকায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবি'র পণ্য রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।"
মুনা আরও বলেন, "শুনেছি সাবেক মেয়রকে গ্রেপ্তারে বাধা দেওয়ার মামলায় জিসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সে পায়ে লিগামেন্টের সমস্যায় ভুগছে। রমজান মাস থেকে সে বাসায় অবস্থান করছিল। ঘটনার দিন সে ইনজেকশন নিয়ে বাসায় ছিল। এমন অবস্থায় তার ঘটনাস্থলে যাওয়া সম্ভব নয়।"
"আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ শাসনামলে যে মামলা বাণিজ্য প্রচলিত ছিল, জিসান সেই মামলা বাণিজ্যের শিকার।" — যোগ করেন মুনা।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, "আন্দোলনের সময় অনেকের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন জিসান। আন্দোলনের প্রথম থেকেই তাকে মাঠে দেখেছি। সে শ্লোগান দিয়েছে, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। আন্দোলন পরবর্তী সময়েও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়ও সক্রিয় ছিল।"
জিসানকে ফাঁসানো হয়েছে দাবি করে সাইফুল বলেন, "জিসান ওইদিন ঘটনাস্থলে ছিল না। সে পায়ের সমস্যায় বাসায় অবস্থান করছিল। সেদিন আমি ফোন করে তার সাথে কথা বলেছিলাম।"
তিনি আরও বলেন, "জিসান তার এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের বিরোধিতা করেছে। আমরা মনে করি, এসব কারণেই প্রতিহিংসামূলকভাবে তাকে ও তার পরিবারকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমি তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।"
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক নিরব রায়হান বলেন, "আমি ব্যক্তিগতভাবে জিসানকে চিনি না। তবে ১৭ ও ১৮ জুলাই আন্দোলনের সময় তাকে দেখেছি। এছাড়া বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপে তাকে আন্দোলনে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়।"
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে জিসান একজন সহযোদ্ধা ছিল বলে জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক লুবনা। তিনি বলেন, "আন্দোলনের সময় আমি নারায়ণগঞ্জের সহ-সমন্বয়ক ছিলাম। জিসান আমার কাছের ছোটভাই। সে একজন সহযোদ্ধা ও ভালো শিক্ষার্থী। একটি মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং তার দ্রুত মুক্তি দাবি করছি।"