২৮ নভেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:১০, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

‘ভুয়া মালিক সেজে’ ভাড়ার নৌযান কাটা হলো বিএনপি নেতার ডকইয়ার্ডে

‘ভুয়া মালিক সেজে’ ভাড়ার নৌযান কাটা হলো বিএনপি নেতার ডকইয়ার্ডে

নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁয়ে ‘ভুয়া মালিক সেজে’ এক বিএনপি নেতার ডকইয়ার্ডে একটি নৌযান (বার্জ) কেটে ফেলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বাদীর অভিযোগ, তার মালিকানার নৌযানটি ভাড়া নিয়ে অনুমতি ছাড়াই কেটে ফেলেছেন এক ব্যক্তি।

বিষয়টি জানার পর গত সোমবার সোনারগাঁ থানায় মামলাটি করেন নৌযানটির মালিক রাকেশ শর্মা। তিনি চট্টগ্রামের রাউজানের আন্ধারমানিকের বাসিন্দা।

মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন: চট্টগ্রামের চাঁন্দগাঁও থানার সরালিয়াপাড়ার মো. শফিউল্লাহ’র ছেলে মোহাম্মদ জাফর (৪২), শাহাদাত (৩৫), সোনারগাঁয়ের বাসিন্দা ইকবাল (৪২), নোয়াখালীর হাতিয়ার চরবগুলার ইমানুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪৭), রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ার গোলাম মোস্তফার ছেলে এমদাদুল হক, জাফর ও হোসেন (৩৫)।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাদের মধ্যে দুই নম্বর আসামি শাহাদাত হোসেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। তিনি এইচবি হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স মেঘনা শিপইয়ার্ড নামে ডকইয়ার্ডের মালিক সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ছেলে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার মামলার ৪ নম্বর আসামি নজরুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলাম।

মামলার এজাহারের বরাতে তিনি বলেন, “নৌযানটির মালিক মূলত চট্টগ্রামের বাসিন্দা রাকেশ শর্মা। তার কাছ থেকে নৌযানটি ভাড়া নিয়েছিলেন এক নম্বর অভিযুক্ত ব্যক্তি মোহাম্মদ জাফর। কিন্তু তিনি মালিককে না জানিয়েই সেটি ডকইয়ার্ডে কেটে ফেলেন।”

মামলার এজাহারে বাদী রাকেশ শর্মা উল্লেখ করেছেন, এক নম্বর বিবাদী জাফর তার পরিচিত এবং তিনি বিভিন্ন সময় পণ্য পরিবহনের জন্য ‘মালেক শাহ কুতুবদিয়া’ নামে নৌযানটি ভাড়ায় নিতেন। গত ১ নভেম্বর এক মাসের জন্য ৭ লাখ ২০ হাজার ভাড়ার চুক্তিও করেন। পরে চট্টগ্রামের সদরের কর্ণফুলি নদীর বাকলিয়ার চরঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর তীরে এইচবি হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স মেঘনা শিপইয়ার্ডে নিয়ে যান।

গত ২৩ নভেম্বর দুপুরে এক শ্রমিকের মাধ্যমে তিনি নৌযানটি কেটে ফেলার তথ্য পান এবং রাতেই সেখানে যান। তার নৌযানটি কেটে ফেলায় ১ কোটি ৭ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। অভিযুক্তরা নৌযানটি কেটে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলেও মামলায় অভিযোগ করেন রাকেশ।

মুঠোফোনে তিনি বলেন, “আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশ নিয়ে সেখানে যাই এবং আমার জাহাজটি কেটে ফেলায় পরে মামলা করি। আমি নিজে মালিক হলেও অভিযুক্তরা জাল দলিল বানিয়ে এটিকে কেটে বিক্রি করার পায়তারা করেছিল। একটি চুক্তিনামাও আমি হাতে পেয়েছি যেখানে জাফর ক্রেতা এবং এমদাদুল বিক্রেতা সেজেছেন।”

বিষয়টি নিয়ে সমাধান পেতে নৌযান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বসেছেন বলেও জানান রাকেশ।

তবে, ডকইয়ার্ডের মালিকের ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা শাহাদাত হোসেনের দাবি, নৌযানটি কাটার জন্য তারা কেবল ডকইয়ার্ডটি ভাড়া দিয়েছেন। অভিযুক্ত মোহাম্মদ জাফর নিজেকে মালিক হিসেবে দেখিয়ে এটি কাটার দায়িত্ব দেন গ্রেপ্তার নজরুলকে।

নৌযানটি ডকইয়ার্ডে রেখে কাটার জন্য ভাড়াবাবদ নজরুলের সঙ্গে ১ লাখ ৬০ হাজার চুক্তিও করেন বলে জানান শাহাদাত।

“আমরা অনেক বছর ধরে ডকইয়ার্ড ব্যবসার সঙ্গে আছি। আমরা কখনো কোনো অনিয়মের সঙ্গে যাইনি। আমরা কেবল ডকইয়ার্ডটি ভাড়া দিয়েছি। তারা বলেছিল, জাহাজের তলা ফেটে গেছে, তাই এটি কাটতে হবে। জাহাজের মালিক হিসেবে জাফর আমাদের কাগজপত্রও দেখিয়েছেন কিন্তু এইসব তো আর আমরা বিআইডব্লিউটিএ’র মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করতে যাইনি। তাছাড়া জাহাজটি কাটার কাজও করেছে নজরুল তার লোকজনের মাধ্যমেই। বিষয়টি জানার পরে আমরা নিজেরাই নজরুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেই।”

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাকে আসামি করার কথাও গণমাধ্যম মারফত জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেন শাহাদাত। “জাহাজ কাটার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলেও” রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনের ইন্ধনে ঘটনাটিতে তাদের ফাঁসানো হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।

এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। উভয়পক্ষের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়