বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলা: বাদী জানেন না আসামির নাম দিলো কারা!
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ৯ মাস পর দায়ের করা একটি হত্যা মামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় ৬২ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও বাদী বলছেন, তিনি মামলায় আসামিদের কারও নাম দেননি। কীভাবে নাম এসেছে, সে ব্যাপারেও কোনো ধারণা নেই তার।
তবে, পুলিশ বলছে, বাদী নিরাপত্তাজনিত কারণে এমন কথা বলছেন।
গত ১৬ মে রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন রুনা বেগম। আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এ নারীর বড়ছেলে সজল মিয়া (২০) গত বছরের বিকেলে ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি ওই এলাকার একটি জুতার দোকানের কর্মচারী ছিলেন।
জুলাই ফাউন্ডেশনের শহীদের তালিকাতেও রয়েছে সজল মিয়ার নাম। ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আরও ২ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতাও পেয়েছেন নিহতের পরিবার।
এদিকে, সজলের মৃত্যুর ৯ মাস পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবুসহ ৬২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সদর উপজেলার শিমরাইলে ঘটলেও আসামির তালিকায় আড়াইহাজার উপজেলার লোকজনও রয়েছেন। এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি ১০০ থেকে ১৫০ জন।
মামলার এজাহারে বাদী লিখেছেন, গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার ছেলেও অংশগ্রহণ করে। গত ২০ জুলাই বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে ছাত্র-জনতার উপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। ওই সময় বাদীর ছেলে সজল মিয়ার পেটে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান এলাকাবাসী। সেখানে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
পরে দেশের পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ময়নাতদন্ত না করে তার ছেলের মরদেহ দ্রুত গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন তিনি।
তার ছেলে মৌচাক এলাকায় তার বাবার সাথে জুতার কারখানায় কাজ করতো বলেও জানান রুনা বেগম।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীদের প্ররোচনায় এবং শামীম ওসমান, আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমানদের উপস্থিতিতে ও তাদের নির্দেশে অপরাপর আসামিরা ছাত্র-জনতাকে মারধরসহ গুলি করে হত্যা করে।
এজাহারে দেওয়া বাদীর মুঠোফোনের নম্বরে যোগাযোগ করা হলে রুনা বেগম বলেন, “আমি নিজে থানায় গিয়ে মামলা করছি ঠিক। কিন্তু কারও নাম দেই নাই। আমি তো কাউরে চিনিই না, কার নাম দিমু?”
মামলার এজাহার থানার ভেতরেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলেও জানান এ নারী। এজাহার লেখার পর বাদী হিসেবে কেবল স্বাক্ষর করেছেন, ভেতরে কী লেখা আছে তাও ‘পড়ে দেখেননি’ বলেও দাবি তার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনূর আলম বলেন, “বাদী নিজে সশরীরে থানায় এসে মামলাটি দায়ের করেছে। এখন হয়তো নিরাপত্তাজনিত কারণে মামলার আসামিদের বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করছেন।”





































