মেঘনার পাড়ে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্পের বিরুদ্ধে গণশুনানি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদীর তীরে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্পের ক্ষতিকর প্রভাব ও পরিবেশগত ন্যায্য অধিকার সুরক্ষার দাবিতে প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণে এক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় মেঘনা ঘাট এলাকায় জেটনেট বিডি ও পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে এ গণশুনানির আয়োজন করা হয়। এতে নদীপাড়ের কৃষক, জেলে ও স্থানীয় বাসিন্দারা অংশগ্রহণ করে তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতা, ভোগান্তি ও উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।
গণশুনানিতে অংশ নেওয়া কৃষকরা বলেন, শিল্পকারখানার বর্জ্য ও দূষণের কারণে কৃষিজমির ঊর্বরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। দূষিত পানির কারণে সেচব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে, যার ফলে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন।
জেলেরা অভিযোগ করেন, নদীতে তেল, কয়লার ছাই ও বিভিন্ন শিল্পবর্জ্য মিশে যাওয়ায় মাছের প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হচ্ছে। মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় দিনের পর দিন জাল ফেলেও অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। এতে তাঁদের জীবিকা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে শিশু ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ও পেটের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পেরে অনেক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাঁদের অভিযোগ, উন্নয়নের নামে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও প্রান্তিক মানুষের ক্ষতির বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।
গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি সোনারগাঁ উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. ফজলুল হক ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের মহাসচিব মীযানুর রহমান।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর উন্নয়ন পরিবেশ ও মানুষের জীবনের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার উপেক্ষা করে কোনো উন্নয়নই টেকসই হতে পারে না।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাজী মো. সাদেক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মো. রিপন ভূঁইয়া, পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির সিনিয়র সহসভাপতি মো. মনির হোসেন, মাওলানা আবু কাউসার ও মাওলানা ইব্রাহিম।
গণশুনানি শেষে অংশগ্রহণকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, নদী ও পরিবেশ রক্ষায় আইন প্রয়োগ জোরদার এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মতামত নীতিনির্ধারণে অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানান।





































