নারায়ণগঞ্জে ছিল কুখ্যাত গডফাদার, বললেন আইন উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, “আমরা নারায়ণগঞ্জকে জানতাম নির্যাতনের প্রতীক হিসাবে। এখানে অনেক বড় ও কুখ্যাত গডফাদার ছিল। এখানে অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, এবং সাত খুনের মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল। আমরা এই নারায়ণগঞ্জকে নির্যাতনের পরিবর্তে মুক্তির জায়গা হিসাবে দেখতে চাই। তারই একটা প্রতীক হিসাবে অনলাইন বেলবন্ডের প্রক্রিঢাটা শুরু করলাম পাইলট প্রকল্প হিসেবে।”
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে দেশের প্রথম জেলা হিসেবে নারায়ণগঞ্জে ই-বেইলবন্ড কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিচারবিভাগীয় সংস্কার কমিশন উচ্চ আদালতের সংস্কারে ১৫টি প্রস্তাব করলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশনের প্রস্তাবগুলো বিবেচিত হয়েছে কিনা তাও জানি না।
নিম্ন আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতেও সংস্কার না হলে ‘বিচারপ্রার্থীরা আল্টিমেটলি লাভবান’ হবেন না মন্তব্য করে উচ্চ আদালতে সংস্কারের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা সচেতন হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সার্কিট হাউজে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন উচ্চ আদালতের সংস্কারের জন্য ১৫টা প্রস্তাব করেছেন। এটা প্রস্তাবও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। বিবেচিত হয়েছে কিনা তাও জানি না। আমি মনে করি, নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত আইসোলেটেড থাকলে হবে না। নিম্ন আদালতে অনেক সংস্কার করবো কিন্তু উচ্চ আদালত আগের মতো থাকবে, তাহলে তো লাভ হবে না। তাহলে বিচারপ্রার্থীরা আল্টিমেটলি লাভবান হবেন না। আশা করি, উচ্চ আদালতের সংস্কারের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা সচেতন হবেন।”
উচ্চ আদালতের কয়েকটি সংস্কারের কথা উল্লেখের পাশাপাশি তিনি ‘বেঞ্চ গঠনের প্রক্রিয়া’ বিকেন্দ্রীকরণেরও প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
বিচার বিভাগে সংস্কার কাজ এখনও শেষ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালের শেষ পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের নিম্ন আদালতের কার্যক্রম পরিদর্শন প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে আইন উপদেষ্টা বলেন, “উচ্চ আদালতের বিচারকরা নিম্ন আদালতের বিচারকরা ঠিকমতো কাজ করছেন কিনা তা দেখতে পরিদর্শনে যান। কিন্তু এটা আর পরিদর্শনে থাকে না আনন্দ ভ্রমণে পরিণত হয়। এমন ঘটনাও শুনেছি, বগুড়াতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি পরিদর্শনের কাজে গিয়েছিলেন। একদিনে ২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা খাবারের বিল হয়েছে। কারণ উনার সাথে বিরাট একটি টিম গিয়েছিল। এ টাকার যোগান দিতে হয় নিম্ন আদালতের দরিদ্র বিচারকদের।”
‘পরিদর্শনের কথা শুনলে নিম্ন আদালতের বিচারকরা ভয়ে থাকেন’ বলেও মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল।
বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে প্রচলিত বেলবন্ড দাখিল পদ্ধতিকে ডিজিটাল মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “বিচার বিভাগে সংস্কারের মূল লক্ষ্য বিচারের সময় কমানো, বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি ও খরচ কমানো এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। এ কারণে সিআরপিসি ও সিপিসিতে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আবু শামীম আজাদ, জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ূন কবির, সাধারণ সম্পাদক এইচএম আনোয়ার প্রধান প্রমুখ।