১৬ বছরে বিএনপিতে মাসুদের অবদানের কথা জানালেন এটিএম কামাল

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক যুবদল নেতা ও ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান মাসুদের বিগত সময়ে দল ও দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি রাখা অবদানের কথা স্বীকার করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেসে’ তিনি এই কথা বলেন।
সাবেক এ বিএনপি নেতা বলেন, “১৬ বছর পর্দার অন্তরালে থেকে অনেকে কাজ করেছেন। হয়তো তারা বিএনপির নামধারী কর্মী, কোনো পদ-পদবীতে ছিলেন না। কেউ হয়তোবা শিল্পপতি, উকিল, সাধারণ নাগরিক ছিল। কিন্তু তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। ১৬ বছরের লড়াইটা অনেক কঠিন ছিল। আজকে অনেকেই বলে ‘অমুক শিল্পপতি সুদিনের পাখি আইসা পড়ছে’, কিন্তু এইটা সত্য। এইযে মডেল মাসুদ (মাসুদুজ্জামান), ওনার ১৬ বছরে তার যে অবদান, এইটা আমরা কীভাবে অস্বীকার করি? আকরাম সাহেবের মিটিংয়ে যখন সভাপতিত্ব করলাম, তখন আমার ছেলেটারে ধইরা নিয়ে গেলো। তখন আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনরাও আমাকে বাড়িতে জায়গা দেয় নাই। ঢাকার রেলস্টেশনে আমি বইসা ছিলাম। পরে মাসুদের সঙ্গে কাজ করেন মনির, সেও কিন্তু বিএনপি করে, উনি আমার খোঁজ নিয়ে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে আসছেন এবং আমাকে ঢাকার বাইরে সেফে চইলা যাইতে বলেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি জেলে ছিলাম, সেখানে জেলার শত শত নেতা-কর্মীদের ধরে আনা হয়। আমি সেখানে তাদের খরচগুলো কন্টিনিউ করছি। এইখানে মাসুদের একটা বড় কন্ট্রিবিউশন ছিল এবং এর জন্য মাসুদকে অনেক সমস্যা ফেস করতে হয়েছে। আমাদের বিএনপিরই কেউ কেউ মাসুদের কন্ট্রিবিউশনের কথা ওসমান পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছিল। এই কারণে কিন্তু তাকে অনেক ধরনের সমস্যা ফেস করতে হইছে। কে নমিনেশন পাবে সেইটা দলের বিষয়। কিন্তু একটা দলে সকল শ্রেণিপেশারই লোকজনের প্রয়োজন আছে।”
২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও বর্তমানে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন এটিএম কামাল। পরে বিএনপির নির্দেশনা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৈমুর ও কামাল দু’জনই দল থেকে বহিষ্কার হন।
এ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, “আমি নিজে তখন নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তৈমুর ভাই টিপুকে দিয়া আমাকে ম্যাসেজ পাঠাইলো যে, নির্বাচন উনিই করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করতে বললেন। তিনি আমার বাসায় এলে আমি তাকে প্রথম প্রশ্নটি করেছিলাম যে, আপনি দল থেকে ক্লিয়ারেন্স নিছেন? তখন তিনি দলের শীর্ষ পর্যায়, মানে লন্ডন থেকে তিনি ক্লিয়ারেন্স নিছেন বলে জানান। কিন্তু উনি কথাটি যে সত্য বলেন নাই, সেইটা প্রমাণ হইছে পরে...আর আমি কিন্তু একা নির্বাচন করি নাই। অনেকেই সেখানে গেছেন, তৈমুর ভাইর নির্বাচন করছেন।”
এ নির্বাচনে তৈমুর আলম নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়েছিলেন বলে গুঞ্জন উঠেছিল।
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এটিএম কামাল বলেন, “আমিও এই প্রশ্নটা শুনেছি। নির্বাচন হইছে একটা কৌশল। বিভিন্ন ধরনের কূটকৌশল চলে নির্বাচনে। সাখাওয়াত হোসেন খানও যখন নমিনেশন পাইছিলেন তখনও কিন্তু ওসমান পরিবারের একটা বড় পার্টিসিপেশন ছিল। এই অন রেকর্ডে তারই সহকর্মীরা এই কথা বলছে। কিন্তু এই নির্বাচনে (২০২২ সালের) অনেকে এইরকম কথাও বলছে, আমেরিকাতে শামীম ওসমান এই ব্যাপারে আমার সাথে মিটিং করছে। কিন্তু আমেরিকাতে শামীম ওসমানের সঙ্গে আমার দেখাও হয় নাই। আর ওসমান পরিবার আমাকে পছন্দ করতো না। ওসমান পরিবারের পারিবারিক অনেক অনুষ্ঠানে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীরা দাওয়াত পাইলেও, এটিএম কামালকে কিন্তু দাওয়াত দেয় নাই।”
“এই প্রশ্ন কিন্তু আমার মনেও আছে যে, তৈমুর সাহেব ওসমান পরিবারের কাছ থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইছে বা নিছে কিনা। কিন্তু এ নির্বাচনে কোনো অর্থ আমি আমার হাতে পাই নাই। আমি কোনো লেনদেন করি নাই। ওই নির্বাচনের সকল অর্থই বিভিন্ন কেন্দ্রে কেন্দ্রে তৈমুর ভাই নিজেই পাঠাইছেন। শামীম ওসমান-সেলিম ওসমানের সাথে আমার কোনো বৈঠক হয় নাই। টাকা-পয়সা তৈমুর সাহেব তাদের কাছ থেকে নিছে, এইটা আমিও শুনছি কিন্তু নিজের চোখে আমি দেখি নাই”, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “তৈমুর আলম খন্দকার ও আইভী দু’জন দু’দলের প্রার্থী ছিল। আইভীও কিন্তু অনেক কৌশল করছে। আইভীও কিন্তু জামায়াতকে টানছে, বিএনপির অনেক নেতাকে টানছে। এইটাও ওপেন সিক্রেট যে, আইভীর জন্য বিএনপির অনেক সাবেক এমপিও কাজ করছে, তাদের পরিবারও কাজ করছে। এর আগে নূর ইসলাম সরদার ও আইভীর পৌর নির্বাচনের সময়ও বিএনপির অনেক নেতা আইভীর পক্ষে কাজ করছে।”
চিকিৎসার কারণে তিনি বিদেশে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান বিএনপির বহিষ্কৃত এ নেতা। তবে, নারায়ণগঞ্জে কাজ করার প্রয়োজনবোধ করলে আবারও ফিরবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, “আমি বিদেশে পড়ে থাকার মানুষ না। আমি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় দল আমাকে বহিষ্কার করে। এই কারণে দলের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নাই।”
বিএনপি থেকে বহিষ্কার হলেও তিনি দলটির একজন সমর্থক হিসেবে থাকবেন বলেও জানান।
কামাল বলেন, “১৯৯৬ সালের পর নারায়ণগঞ্জে এক ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। তখন আমার কী ধরনের ভূমিকা ছিল আপনারা জানেন। এইখানে একজন সাংবাদিক ভাই রয়েছে, তিনি তখন আমার সহকর্মী ছিলেন। ’৯৬ পরবর্তী আন্দোলনে যখন শামীম ওসমান গডফাদার রূপে আবির্ভূত হলো তখন আবু সাউদ মাসুদ ভাই মানবজমিনে তাকে প্রথম গডফাদার হিসেবে উপাধি দিলো বা প্রসঙ্গটা তুলে ধরলো। সেই সময় আমি রাজপথে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম।”
“তখন মাসদাইরের মজিবুরকে হত্যা করা হয়েছিল। সে যুবদল কর্মী ছিল। শামীম ওসমানের বিজয় মিছিল থেকে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এই মজিবুর হত্যায় আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। যে কারণে ওই সময় আমার বিরুদ্ধে ২৪টা মামলা হয়। আমি এরপরও রাস্তায় ছিলাম।”
দলের কাছে বহিষ্কারারাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন বলেও জানান তিনি।