বার নির্বাচন: বিএনপির অন্তঃকোন্দলে বলি হতে পারেন হুমায়ূন

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে। আগামী ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পেশাজীবী এ সংগঠনটির কার্যকরী কমিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটের আগে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচার-প্রচারণায়।
এবারের নির্বাচনে তিনটি প্যানেল অংশ নিলেও সবার নজরে রয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মনোনীত হুমায়ুন-আনোয়ার প্যানেল। নির্বাচনে আছে জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল। তবে, বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের একটি অংশ নানা অভিযোগ তুলে পাল্টা একটি প্যানেল ঘোষণা করায় নির্বাচনের মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, বহিষ্কারসহ নানা ইস্যু এখন আদালতপাড়ায় আলোচনার কেন্দ্রে।
যদিও বিএনপির বিদ্রোহী প্যানেলের দু’জন প্রার্থী দলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের তারিখ চলে যাওয়াতে তাদের নামে ব্যালট ইস্যু হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচনের নানা সমীকরণ বিশ্লেষণ ও আইনজীবী ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী আনোয়ার প্রধানের জয় অনেকটাই নিশ্চিত। তবে সভাপতি পদে প্রার্থী এডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবিরের পথ সহজ নয়।
একাধিক সূত্র বলছে, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন নেতৃত্বে ছিলেন অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির। তবে সংগঠনের ভেতরে ঐক্যের অভাব হুমায়ূনের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই ফোরামের মধ্যে গ্রুপিং রয়েছে। আদালতপাড়ার প্রভাবশালী আইনজীবী ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশিরভাগ আইনজীবী এবার ফোরামের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও সভাপতি প্রার্থী হুমায়ূন কবিরকে একটি অংশ পুরোপুরি মেনে নিতে পারছেন না আলোচিত বিএনপি নেতা জাকির খানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে। এই জন্য সেই অংশ গোপনে গোপনে সরকার হুমায়ুন কবিরকে মাইনাসের পরিকল্পনা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে।
এর আগে ফোরামের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে সভাপতি পদে মাত্র দুই ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন সরকার হুমায়ূন কবির। তিনি পেয়েছিলেন ১২৫ ভোট, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন পেয়েছিলেন ১২৩ ভোট।
বর্তমান পরিস্থিতিতে হুমায়ূন কবির এগিয়ে থাকলেও বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সুবিধা নিতে পারে অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থিত ল’ইয়ার্স কাউন্সিল এবং বিএনপিপন্থী আরেকটি প্যানেল ঐক্য পরিষদ নিজেদের অবস্থান জোরদারে সরব রয়েছে। তারা সভাপতি পদে জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী।
আদালতপাড়ার নিয়মিত খোঁজখবর রাখা অনেক আইনজীবী মনে করছেন, যদি বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হতে না পারেন তবে ভোটের মাঠে এর খেসারত দিতে হবে এডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবিরকে। এ বিভক্তির সুযোগ নেবে জামায়াত সমর্থিত ল’ইয়ার্স কাউন্সিল ও আইনজীবী ঐক্য পরিষদ। পাশাপাশি সাধারণ আইনজীবী ও আওয়ামীপন্থী ভোটারদের ভূমিকা নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সেক্ষেত্রে হুমায়ূন কবিরের ভোটের মাঠ এখন নড়বড়ে।